হোলি উৎসব
ভারতে বহু মসজিদে পেছাল জুমার নামাজের সময়
 প্রকাশিত: 
                                                ১৩ মার্চ ২০২৫ ১১:১৯
 আপডেট:
 ১৩ মার্চ ২০২৫ ১১:৪৮
                                                
 
                                        আগামীকাল শুক্রবার (১৪ মার্চ) ভারতে হোলি উৎসব। আর এই উৎসবের কারণে দেশটির উত্তর প্রদেশ রাজ্যের অযোধ্যাসহ বিভিন্ন স্থানে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে জুমার নামাজ।
সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেই এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, হোলি উৎসবের কারণে অযোধ্যার মসজিদগুলোতে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে দুপুর ২টার পর।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে বুধবার (১২ মার্চ) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এই সপ্তাহে হোলি উদযাপনের কথা মাথায় রেখে অযোধ্যার সমস্ত মসজিদে জুমার নামাজ দুপুর ২টার পরে পড়া হবে বলে উত্তর প্রদেশের এই শহরের একজন বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতা জানিয়েছেন।
মূলত অযোধ্যার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় নেতা মোহাম্মদ হানিফ বুধবার এই সপ্তাহের জুমার নামাজের জন্য এই নির্দেশনা জারি করেছেন। হোলি উৎসব হতে যাওয়া এই দিনটি পবিত্র রমজান মাসের দ্বিতীয় শুক্রবারও।
এনডিটিভি বলছে, ১৪ মার্চ শুক্রবারের জুমার নামাজের সাথে হোলি উদযাপনের সময়ের মিল থাকায় কর্তৃপক্ষ অনেক জায়গায় নামাজের সময় নিয়ে আলোচনা করছে। অযোধ্যা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম) চন্দ্র বিজয় সিং বলেছেন, হোলির জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং কোনও ধরনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এড়াতে শান্তি কমিটির সভাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পিটিআই-এর সাথে কথা বলতে গিয়ে অযোধ্যার কেন্দ্রীয় মসজিদ— মসজিদ সরাইয়ের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ বলেন, হোলি উদযাপনের জন্য জুমার নামাজের সময় সমন্বয় করা হবে। তিনি বলেন, “হোলি উৎসবের সময় বিবেচনা করে, আমরা সমস্ত মসজিদকে জুমার নামাজ দুপুর ২টার পরে পড়ার নির্দেশ দিয়েছি, কারণ বিকেল ৪.৩০ টা পর্যন্ত জুমার নামাজ পড়ার সুযোগ থাকে।”
মোহাম্মদ হানিফ আরও বলেন, “আমি মুসলিম সম্প্রদায়ের সকল সদস্যকে হোলির সময় ধৈর্যশীল এবং উদার থাকার আহ্বান জানিয়েছি। যদি কেউ তাদের গায়ে রঙ লাগায়, তাহলে তাদের হাসিমুখে সাড়া দেওয়া উচিত এবং ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার চেতনায় ‘হোলি মোবারক’ বলা উচিত। একইদিনে হোলি এবং জুমার নামাজ এবারই প্রথম নয়। এটি প্রায়শই হয় এবং এটি আমাদের ঐক্য গড়ে তোলার একটি সুযোগ।”
অযোধ্যার তাবলীগ মারকাজের ‘আমির’ হানিফ জনগণকে হোলির শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের হিন্দু ভাইদের হোলির জন্য শুভকামনা জানাই। আমরা তাদের আনন্দে অংশীদার এবং উদযাপনে তাদের সাথে আছি।”
অযোধ্যার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম) চন্দ্র বিজয় সিং বলেছেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সমস্ত হোলিকা দহন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ১৩ মার্চ হোলিকা দহন উদযাপিত হবে। তিনি বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করতে” হোলিকা দহন কেবল প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী স্থানেই করতে দেওয়া হবে, নতুন স্থানে নয়।”
জেলা প্রশাসক বলেন, “যেকোনও জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমরা সমস্ত হোলিকা দহন স্থানে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করছি। প্রশাসন সতর্ক রয়েছে, বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাস চলমান থাকায়। শান্তিপূর্ণ উদযাপন নিশ্চিত করার জন্য শহর ও গ্রামের ধর্মীয় নেতা এবং সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট সদস্যদের সাথে শান্তি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।”
এদিকে অযোধ্যার মতো উত্তরপ্রদেশের কনৌজ জেলার মুসলিম ধর্মীয় নেতারও ঘোষণা করেছেন, শুক্রবার মসজিদে দুপুর ২টার পরে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে উত্তরপ্রদেশের সম্ভলের একজন সার্কেল অফিসার জুমার নামাজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যারা হোলির রঙে অস্বস্তি বোধ করেন তাদের ঘরের ভেতরেই থাকা উচিত, কারণ এই উৎসব বছরে মাত্র একবার আসে যেখানে জুমার নামাজ বছরে ৫২বার হয়।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সম্ভল পুলিশ অফিসারের বিতর্কিত ওই মন্তব্যকে সমর্থনও করেন। তিনি বলেন, ওই কর্মকর্তা হয়তো “পালোয়ানের” মতো কথা বলেছেন, কিন্তু তিনি যা বলেছেন তা সঠিক।
এনডিটিভি বলছে, হোলি উৎসবের আগে রাজ্যের অনেক মসজিদ শুক্রবারের জুমার নামাজের সময় পরিবর্তন করেছে।
উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনৌ ঈদগাহের ইমাম সেখানকার মসজিদগুলোকে শুক্রবার দুপুর ২টায় জুমার নামাজ পড়তে বলেছেন। তিনি মুসলমানদের দূরবর্তী মসজিদে না গিয়ে নিকটবর্তী মসজিদে নামাজ পড়ার পরামর্শও দিয়েছেন।
একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার মতে, হিন্দুরা ১৪ মার্চ দুপুর ২.৩০ টা পর্যন্ত হোলি উদযাপন করবে এবং মুসলমানরা দুপুর ২.৩০টার পরে জুমার নামাজ পড়বে বলে সম্ভলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আলিগড়ের প্রধান মুফতি খালিদ হামিদ হোলি উৎসব যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয় তা নিশ্চিত করার জন্য মুসলিমদের সকল সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্পর্কিত বিষয়:



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: