দেশ-মহাদেশ ঘুরে ভয়াবহ বায়ুদূষণ করছে ১৫ ধনী ক্লাব!
প্রকাশিত:
১৪ আগস্ট ২০২৫ ১৫:৪২
আপডেট:
১৪ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৪৬

প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি হিসেবে দেশ-মহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে সফর করছে ইউরোপীয় ক্লাবগুলো। মাঠের পরাশক্তি এসব দল আর্থিক দিক থেকেও অনেক বেশি দামী। এমন ১৫টি ক্লাব সাম্প্রতিক সময়ে এক লাখ ৮৩০৯৫ কিলোমিটার ভ্রমণ করেছে বলে জরিপ চালিয়েছে ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’।
তাদের দাবি– আকাশপথে ক্লাবগুলোর লম্বা ভ্রমণের কারণে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণে ভয়াবহ পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়– ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল প্রাক-মৌসুমের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে স্পেন ও সিঙ্গাপুরে ভ্রমণ করেছে। এরপর হংকং হয়ে ফিরেছে ইংল্যান্ডে। সবমিলিয়ে তাদের ভ্রমণ ছিল ২৪,৬৫৭ কিলোমিটার। গানারদের চেয়েও বেশি (মূলত সর্বোচ্চ) পথ পাড়ি দিয়েছে ইন্টার মিলান। ইতালিয়ান ক্লাবটি সিঙ্গাপুর, হংকং, অস্ট্রেলিয়ার পার্থ হয়ে মিলানে ফিরে। পরে আবারও লন্ডন ও ডাবলিনে উড়াল দেয় ইন্টার। সবমিলিয়ে তারা ৪০,০০০ কিলোমিটার সফর করেছে।
বার্সেলোনা-লিভারপুলের মতো ইউরোপ জায়ান্টদেরও গন্তব্য ছিল এশিয়া মহাদেশ। হ্যান্সি ফ্লিকের কাতালান ক্লাবটি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান এবং আর্নে স্লটের লিভারপুল হংকং ও জাপানে সফর করেছে। অবশ্য ১৫ ধনী ক্লাবের সবগুলোই আবার দূরপাল্লার ভ্রমণ করেছে তা নয়। সর্বশেষ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৭.৬ বিলিয়ন ব্রাজিলিয়ান ডলার রাজস্ব আয় করা রিয়াল মাদ্রিদ কেবল অস্ট্রিয়ার বিমানে চড়েছে। বায়ার্ন মিউনিখ, চেলসি ও পিএসজির মতো ক্লাব আবার এই সময়ে দেশের বাইরে ভ্রমণ করেনি।
প্রাক-মৌসুমে বিভিন্ন ক্লাবের ভ্রমণদূরত্ব ও কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ (ছবি- গ্লোবো)
গ্লোবো বলছে, সবমিলিয়ে ধনী ক্লাবগুলোর ১,৮৩০০০ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ মানে প্রচুর জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো এবং এর ফলে বায়ুমণ্ডলে আরও বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছড়িয়ে পড়া। তাদের ভ্রমণে প্রায় ৫,২১,৪০৪ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নিঃসৃত হয়েছে। ব্রাজিলিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফরেস্টস (আইবিএফ)–এর হিসাব অনুযায়ী, এত কার্বন শুষে নিতে প্রথম ২০ বছরে প্রায় ৩,৭২০টি গাছ রোপণ প্রয়োজন হবে।
ভ্রমণে ব্যবহৃত বিমান কিংবা উড়োজাহাজ আকাশে উড়তে ব্যাপক জ্বালানি পোড়ায়। এই জ্বালানি পোড়ানোর ফলে তৈরি হয় কার্বন ডাই-অক্সাইড, যা অন্যতম ক্ষতিকর গ্রিনহাউজ গ্যাস। ফুটবল ক্লাবগুলো পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার অন্যতম বড় কারণ এটি। ক্লাইমেট অবজারভেটরির গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ অনুমান ও অপসারণ ব্যবস্থার সমন্বয়ক ডেভিড সাই জানিয়েছেন, ‘বিমান জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে গ্রিনহাউজ গ্যাস তৈরি করে বিমান কেরোসিন। এই বিমানগুলো থেকে নির্গত কার্বন বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বড় অবদান রাখে।’
প্রাক-মৌসুমের প্রস্তুতিতে ক্লাবগুলো কেন এই ট্যুর করে এমন প্রশ্নও এসে যায়। এর উত্তরও অজানা নয়– মূলত বেশি অর্থ পাওয়ার লক্ষ্যেই এসব আয়োজন। বিভিন্ন দেশে সফর ক্লাবগুলোর আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। যেমন– ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২০২৪/২৫ মৌসুম-পরবর্তী মালয়েশিয়া সফর থেকে প্রায় ১ কোটি ইউরো আয় করেছে। বার্সেলোনা এবার এশিয়ায় ১.৫ কোটি ইউরো আয় করেছে। নতুন বাজারে পৌঁছানো ও ব্র্যান্ডকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করাই তাদের লক্ষ্য। ক্লাবটি জানিয়েছে, জাপানে তাদের ৩.৬ মিলিয়ন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ২.৩ মিলিয়ন সমর্থক আছে।
এদিকে, ক্লাবগুলোর কারণে ইতিমধ্যেই জলবায়ু সংকট তৈরি হয়েছে। তাই ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’ কমাতে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে বলে দাবি ফুটবল ও পরিবেশের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। বেসরকারি সংস্থা ‘ফসিল ফ্রি ফুটবল’-এর কর্মী পিটার ক্রিস্প বলেন, ‘ক্লাবগুলোকে প্রাক-মৌসুম সূচি স্থানীয়ভাবে করতে হবে। কাছাকাছি এলাকায় খেললে খেলোয়াড়দের ওপর চাপ কমবে এবং দরিদ্র ক্লাবগুলোর জন্যও উপকারী হবে।’
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: