মহানবী (সা.) এর স্মৃতি বিজড়িত ৭টি জায়গা
প্রকাশিত:
১৩ মে ২০২৫ ১৮:২৬
আপডেট:
১৪ মে ২০২৫ ০০:০৫

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার পুরো জীবন ইসলামের পথে ব্যয় করেছেন। আরব অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে তার স্মৃতি জরিয়ে আছে। মহানবী (সা.) এর স্মৃতিবিজরিত সাতটি স্থানের তালিকা—
১.মসজিদুল হারাম (মক্কা)।
২. মসজিদে নববী (মদীনা)।
৩. আল-আকসা মসজিদ (জেরুজালেম)।
৪. কুবা মসজিদ (মদীনা)।
৫. উহুদ পাহাড় (মদীনা)।
৬. জান্নাতুল বাকি কবরস্থান (মদিনা)।
৭. রিয়াজুল জান্নাহ (মসজিদে নববীর ভিতরে)।
মসজিদুল হারাম
ইসলামের পবিত্রতম স্থান মসজিদুল হারাম। বায়তুল্লাহ বা কাবাঘরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মসজিদুল হারাম। নামাজ আদায়ের জন্য মুসলমানদের কাবা অভিমুখী হওয়া অবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা (নামাজের সময়) কাবার দিকে মুখ কর।` (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৯)
আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন, ‘অন্যান্য মসজিদের নামাজের তুলনায় মসজিদুল হারামের নামাজ এক লক্ষ গুণ উত্তম।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৪০৬)
মসজিদে নববী
মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরতের পর মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করেন। হিজরতের পর মদিনায় গিয়ে মহানবী (সা.) কে বহনকারী উটটি যেখানে বসেছিল, সেই জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করেন তিনি। জায়গাটি দুইজন এতিম শিশুর মালিকানাধীন ছিল। তিনি শিশুদের কাছ থেকে জায়গাটি কিনে নেন।
মসজিদে নববী ছিল মদিনার মুসলিম সমাজের কেন্দ্রবিন্দু। নামাজ ছাড়াও সাহাবিরা এখানে অবস্থান করতেন। মহানবী (সা.) এর কথা শুনতেন।
মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ার ফজিলত সম্পর্কে হজরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার এ মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস : ১১৯০; মুসলিম, হাদিস : ১৩৯৪)
আল-আকসা মসজিদ
ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত আল আকসা মসজিদও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর স্মৃতিবিজরিত। মেরাজের রাতে তিনি বুরাকে চড়ে আল আকসা মসজিদে এসেছিলেন। এখানে নবীদের নিয়ে ইমামতি করেছিলেন।
মসজিদুল হারামে নামাজ আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে এক হাদিসে হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মসজিদে হারামে এক নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববী) এক নামাজ এক হাজার নামাজের সমান এবং বাইতুল মাকদাসে এক নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।’ (মাজমাউয যাওয়াইদ, ৪/১১)
মহানবী (সা.) নবুওয়ত লাভের পর ইসলামের ইতিহাসে নির্মিত প্রথম মসজিদ হলো মসজিদে কুবা। মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় মদিনার অদূরে কুবায় এ মসজিদ নির্মাণ করেন।
এর আগে মক্কায় তিনি কোনো মসজিদ নির্মাণ করেননি। হিজরতের প্রথম দিন কুবা অবস্থানকালে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। মসজিদের নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে স্বয়ং রাসুল (সা.) অংশগ্রহণ করেন।
কুবা মসজিদের জায়গাটি ছিল- হযরত কুলসুম ইবনুল হিদম (রা.)-এর খেজুর শুকানোর পতিত জমি। তিনি ছিলেন আমর ইবনে আওফের গোত্রপতি। এখানে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ১৪ দিন (কেউ বলেন ১০ দিন) অবস্থান করেন ও তার আতিথ্য গ্রহণ করেন।
উহুদ পাহাড়
উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে ইসলামের ইতিহাসের বিখ্যাত উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বদর যুদ্ধে কুরাইশরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। সেই যুদ্ধের প্রতিশোধ হিসেবে উহুদ যুদ্ধে অংশ নেয় কুরাইশ নেতারা।
এই যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় প্রায় নিশ্চিত ছিল। তবে শেষ পর্যায়ে এসে পরাজয় বরণ করেন মুসলমানরা। কুরাইশদের হাতে শহীদ হন মহানবী (সা.) এর প্রিয় চাচা হামজা (রা.)।
এই পাহাড়টি মহানবী (সা.) এর খুব প্রিয় ছিল। হজরত আনাস ইবনু মালিক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উহুদ এমন একটি পাহাড় যা আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি। (সহিহ মুসলিম)
জান্নাতুল বাকি কবরস্থান
জান্নাতুল বাকি মদিনার প্রথম এবং প্রাচীনতম কবরস্থান। এখানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবি ও পরিবারের লোকদের কবর রয়েছে। জান্নাতুল বাকিতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা রুকাইয়া (রা.) কে সর্বপ্রথম দাফন করা হয়। বদর যুদ্ধের সময় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা রুকাইয়া (রা.) অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পর তাকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।
রিয়াজুল জান্নাহ
রিয়াজুল জান্নাহ মসজিদে নববীর ভেতরের একটি অংশ। এই অংশটিকে জান্নাতের অংশ বলা হয়। এখানে নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বলেছেন,
‘আমার ঘর ও মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানগুলোর একটি বাগান আর আমার মিম্বার অবস্থিত আমার হাউজ (কাউসার)-এর ওপরে। -(বুখারি, হাদিস :১১৯৬, ১১২০; মুসলিম, হাদিস : ২৪৬৩)
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: