বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে জুলাই ২০২৫, ১৬ই শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


কোরআন তেলাওয়াতের সময় কান্না নেককার বান্দাদের অলংকার


প্রকাশিত:
৩০ জুলাই ২০২৫ ১৭:৪১

আপডেট:
৩১ জুলাই ২০২৫ ১৮:৩৮

ছবি সংগৃহীত

কোরআন তেলাওয়াতের সময় চোখে পানি আসা নেককার বান্দাদের বিশেষ গুণ। নবীজি (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম আয়াতের মর্ম বুঝে এমনভাবে কাঁদতেন যে, তাদের অশ্রু মাটি ভিজিয়ে দিত। এই লেখায় আমরা দেখব, কীভাবে কোরআনের তেলাওয়াত হৃদয়কে গলায়, চোখকে অশ্রুতে ভাসিয়ে দিতে পারে।

তেলাওয়াত শুনে নবীজির কান্না

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে বললেন, “তুমি আমাকে কোরআন পড়ে শোনাও।” আমি বললাম, “আমি আপনাকে তেলাওয়াত শোনাব, অথচ আপনার ওপরই তো এটি অবতীর্ণ হয়েছে?” তিনি বললেন, “আমি অন্যের তেলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি।” আমি সুরা নিসা তেলাওয়াত করতে লাগলাম। যখন আমি এই আয়াতটি পাঠ করলাম- فَکَیۡفَ اِذَا جِئۡنَا مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍۭ بِشَهِیۡدٍ وَّ جِئۡنَا بِکَ عَلٰی هٰۤؤُلَآءِ شَهِیۡدًا “যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব তাদের ওপর সাক্ষীরূপে, তখন কী অবস্থা হবে?” (সুরা নিসা: ৪১) তিনি বললেন, “ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে।” আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম—চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। (বুখারি ৫০৫০; মুসলিম ১৯০৩)

সাহাবাদের অশ্রুভেজা তেলাওয়াত

একদিন কাসিম (রহ.) দেখতে পান, আয়েশা (রা.) একটি আয়াত বারবার আবৃত্তি করছেন আর কাঁদছেন- فَمَنَّ اللّٰهُ عَلَیۡنَا وَ وَقٰىنَا عَذَابَ السَّمُوۡمِ “অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং আগুনের আজাব থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন।” (সুরা তুর: ২৭)

ইবনে আব্বাস (রা.) এই আয়াত তেলাওয়াত করে অঝোরে কাঁদতেন- وَ جَآءَتۡ سَکۡرَۃُ الۡمَوۡتِ بِالۡحَقِّ ؕ ذٰلِکَ مَا کُنۡتَ مِنۡهُ تَحِیۡدُ “আর মৃত্যুর যন্ত্রণা অবশ্যই আসবে, যা থেকে তুমি পলায়ন করতে চাইতে।” (সুরা ক্বফ: ১৯)

ইবনে ওমর (রা.) এই আয়াত পাঠ করে কান্নায় ভেঙে পড়তেন- وَ اِنۡ تُبۡدُوۡا مَا فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ اَوۡ تُخۡفُوۡهُ یُحَاسِبۡکُمۡ بِهِ اللّٰهُ “তোমাদের মনে যা আছে, তা যদি প্রকাশ করো বা গোপন রাখো, আল্লাহ তার হিসাব নেবেন।” (সুরা বাকারা: ২৮৪)

কোরআন শ্রোতাদের কান্না আল্লাহর প্রিয়

আল্লাহ তাআলা প্রশংসা করেন সেই মানুষদের, যারা তেলাওয়াতে আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদে— وَ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ یَبۡکُوۡنَ وَ یَزِیۡدُهُمۡ خُشُوۡعًا “তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।” (সুরা বনি ইসরাইল: ১০৯)

আরেক আয়াতে বলা হয়েছে- إِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُ الرَّحْمَنِ خَرُّوا سُجَّدًا وَبُكِيًّا “যখন তাদের নিকট পরম দয়াময়ের আয়াত পাঠ করা হত, তারা কাঁদতে কাঁদতে সিজদায় পতিত হত।” (সুরা মরিয়ম: ৫৮)

ঈমানের আলামত ও জান্নাতের চাবি

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- “কোরআনের পাঠকদের মধ্যে সেই ব্যক্তির কণ্ঠ সবচেয়ে উত্তম, যার তেলাওয়াত শুনে মনে হয় সে কাঁদছে।” (ইবনে মাজাহ: ১৩৩৯)

আর তিনি আরও বলেন: “আল্লাহর ভয়ে যে কাঁদে, সে জান্নাতের অধিকারী। যেমনভাবে দোহন করা দুধ পুনরায় স্তনে ফিরে যেতে পারে না, তেমনি সে জাহান্নামে যেতে পারে না।” (তিরমিজি: ১৬৩৩) তিনি সাহাবিদের বলতেন— “...আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি, যদি তোমরাও তা জানতে, তবে তোমরা কম হাসতে, বেশি কাঁদতে...” (ইবনে মাজাহ: ৪১৯০)

কান্নার ৫টি আধ্যাত্মিক সুফল
১. গুনাহ মাফ হয়
২. হৃদয় নরম হয়
৩. আল্লাহর নৈকট্য বাড়ে
৪. ঈমান বৃদ্ধি পায়
৫. জান্নাত নিশ্চিত হয়

টিপস

প্রতিদিন একটি আয়াত নির্বাচন করে তার অর্থ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন
আয়াতের বার্তাকে নিজের জীবনের সাথে সম্পর্কিত করুন
নির্জন স্থানে তেলাওয়াত করুন যাতে কান্নায় বিঘ্ন না ঘটে
আল্লাহর কাছে কান্নার তাওফিক চেয়ে দোয়া করুন
তেলাওয়াত হোক হৃদয় ছোঁয়া কান্নার মাধ্যম
কোরআন তেলাওয়াত যেন নিছক মুখস্থের চর্চা না হয়, বরং অন্তরকে জাগিয়ে তোলে, চোখকে ভিজিয়ে দেয় এবং আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়—এটাই আসল লক্ষ্য। আল্লাহর ভয়, পরকালের জবাবদিহি ও জান্নাত-জাহান্নামের চিন্তা হৃদয়ে রেখে তেলাওয়াত করা—এটি আল্লাহর খুব প্রিয় ইবাদত।

আসুন, আমরা কোরআন তেলাওয়াতে কান্নার সেই হারানো গুণ ফিরে আনি। আজ থেকেই একটি আয়াত নির্বাচন করে গভীরভাবে তেলাওয়াত ও তাদাব্বুরের চেষ্টা করি। আল্লাহ তাওফিক দিন। আমিন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top