রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম নিয়ে আপিল বিভাগে ফের শুনানি
প্রকাশিত:
১৮ মে ২০২৫ ১১:০৭
আপডেট:
১৮ মে ২০২৫ ১৫:২৬

রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) নিয়ে দীর্ঘদিনের পুরোনো মামলার শুনানি আবার শুরু হয়েছে। রোববার (১৮ মে) সকালে আপিল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এম ইমান আলীর (আশফাকুল ইসলামের পরিবর্তে এদিন দায়িত্বে ছিলেন) নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় তিন সপ্তাহ পর আজ ফের এই মামলার শুনানি কার্যক্রমে গতি এলো।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষে আজ যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। এর আগে, ২৭ এপ্রিল আপিল বিভাগে এই মামলার সর্বশেষ শুনানি হয়, যা আজ পর্যন্ত মুলতুবি ছিল।
রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদার ক্রম নির্ধারণে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে সচিবদের বিচার বিভাগের জেলা জজদের চেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি শুরু থেকেই সমালোচিত হয়ে আসছে।
মূলত, ১৯৮৬ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘রুলস অব বিজনেস’ অনুযায়ী একটি রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের তালিকা প্রণয়ন করে, যা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এরপর একাধিকবার এর সংশোধন হলেও, বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের অবস্থান নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই যায়।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে হাইকোর্টে রিট করেন, যেখানে তিনি ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন।
২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করে দেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় দেন। সেখানে হাইকোর্টের নির্দেশনার কিছু সংশোধন এনে আপিল বিভাগ তিনটি মৌলিক নির্দেশনা দেয়—
১. সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন; তাই রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদার বিরোধপূর্ণ স্থানে সাংবিধানিক পদধারীদের অগ্রাধিকার থাকতে হবে।
২. জেলা ও দায়রা জজ এবং সমমর্যাদার বিচারকগণ সরকারের সচিবদের সঙ্গে একসঙ্গে ১৬ নম্বরে অবস্থান করবেন।
৩. অতিরিক্ত সচিবগণ থাকবেন জেলা জজদের পরেই, অর্থাৎ ১৭ নম্বরে।
চূড়ান্ত রায়ের পরেও রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদার গেজেট বাস্তবায়নে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। ফলে মামলাটি ফের আলোচনায় আসে। আজকের শুনানিতে আদালতের নজর মূলত রয়েছে সরকারি ব্যাখ্যার ওপর, যে যুক্তিতে সচিবদের উচ্চস্থানে রাখা হয়েছে।
আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদার মতো সংবেদনশীল বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সমাধানে পৌঁছাতে হলে সংবিধান, বিচার বিভাগের মর্যাদা ও প্রশাসনিক কাঠামোর ভারসাম্য বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই মামলার ফলাফল প্রশাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে পদমর্যাদা সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের একটি অনিশ্চয়তা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: