শুক্রবার, ২৯শে আগস্ট ২০২৫, ১৩ই ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


প্রতিদিন ২০ গৃহবধূর মৃত্যু, পণের চাপের কাছে হেরে যাচ্ছে ভারতের নারীরা


প্রকাশিত:
২৮ আগস্ট ২০২৫ ১৩:৫৮

আপডেট:
২৯ আগস্ট ২০২৫ ০০:১৪

ছবি ‍সংগৃহিত

ভারতের উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডায় ২১ আগস্ট ১৭ বছর বয়সি নিক্কি ভাটিয়াকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারা হলো। এই ঘটনাটি শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং গোটা ভারতের নারীর জীবনের ভয়াবহ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। নিক্কির মৃত্যু আবারও সামনে নিয়ে এল ভয়ংকর এক সত্য—ভারতের মতো বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশেও আজও নারীরা যৌতুেকর দাবিতে নৃশংস অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান চমকে দেওয়ার মতো। ২০১৭ থেকে ২০২২—মাত্র পাঁচ বছরে ৩৫ হাজার ৪৯৩ নারীকে হত্যা করা হয়েছে শুধুমাত্র যৌতুকের কারণে। গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ নারী মারা যাচ্ছেন শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন ও যৌতুকের কারণে। ভারতে ১৯৬১ সাল থেকে পণপ্রথা নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবতা বলছে, আইনের কাগজে কলমে থাকা আর গ্রামীণ কিংবা শহুরে সমাজে চর্চিত প্রথার মধ্যে ব্যবধান বিশাল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পণ আজও ভারতীয় সমাজে লেনদেনের অপরিহার্য অংশ। সমাজকর্মী যোগিতা ভায়ানা জানান, রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠেও তিনি দেখেছেন বিয়েতে ফর্চুনার কিংবা মার্সেডিজ গাড়ি খোলাখুলি দেওয়া হচ্ছে পণ হিসেবে। শুধু তাই নয়, নিক্কির বাবাও জামাইকে সর্বশেষ মডেলের এসইউভি, গয়না ও নগদ অর্থ দিয়েছেন। কিন্তু এত কিছু দেওয়ার পরও মেয়ের প্রাণ বাঁচেনি।

রাজস্থানের যোধপুরে সরকারি স্কুলশিক্ষিকা সঞ্জু বিষ্ণোইর ঘটনা নিক্কির মৃত্যুর সঙ্গে মিলে যায়। তিন বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে তিনি নিজেই আগুন ধরিয়ে দেন, কারণ বিয়ের ১০ বছর পরও তার শ্বশুরবাড়ি থেকে যৌতুকের দাবি থামেনি। সরকারি চাকরি ও স্থায়ী আয়ের পরও তিনি শেষ পর্যন্ত নির্যাতনের কাছে হার মানেন।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ভারতীয় সমাজে পণকে এখনো পুরুষের ‘অধিকার’ মনে করা হয়। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ৯০ শতাংশ ভারতীয় বিয়েতেই যৌতুক দেওয়া হয়। ১৯৫০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ভারতে যৌতুক বাবদ লেনদেনের অঙ্ক দাঁড়ায় ২৫০ বিলিয়ন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় ২১ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ সমাজে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটলেও, মানসিকতায় তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।

নিক্কি ভাটির মৃত্যু ভারতের সমাজকে আবারও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। দেশ যখন বিশ্বের প্রথমসারির অর্থনীতি হওয়ার প্রতিযোগিতায়, তখন কি এই ধরনের বর্বর প্রথা ভারতীয় নারীর জীবনে অন্ধকার ডেকে আনবে? এনসিআরবি–র তথ্য বলছে, পরিবর্তনের দাবি কেবল স্লোগানে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনের নিরাপত্তা রক্ষায় কঠোর প্রয়োগ দরকার।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top