বুধবার, ৩০শে জুলাই ২০২৫, ১৫ই শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


দান-অনুদান নয়, বিচার চাই : জুলাই শহীদ কাউছারের মা-বাবা


প্রকাশিত:
২৯ জুলাই ২০২৫ ১৮:৫৯

আপডেট:
৩০ জুলাই ২০২৫ ০৮:০৮

ছবি ‍সংগৃহিত

আমরা কোনো দান-অনুদান চাই না। আমরা চাই কাউছারসহ সব হত্যার বিচার। আমরা সেই বিচারের অপেক্ষায় রয়েছি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছেলে আন্দোলনে গিয়ে প্রাণ দিয়েছে। সেই বৈষম্য দূর হবে, তার রক্ত যেন বৃথা না যায়— এভাবেই কথাগুলো বলেছেন লক্ষ্মীপুরে জুলাই আন্দোলনে গুলিতে নিহত কাউছার হোসেন বিজয়ের মা জোসনা আক্তার ও বাবা ইসমাইল হোসেন।

কাউছার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উত্তর জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা ও লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। এলাকায় টিউশনি করিয়ে ১০ হাজার টাকা পেতেন কউছার। তবে সেই টাকাগুলো তিনি তার মায়ের হাতেই তুলে দিতেন।

কাউছারের মা-বাবা জানান, কাউছার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিল না। একজন ছাত্র হিসেবেই চাকরিতে কোটা বাতিলের জন্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যেত। বারবার নিষেধ করলেও সে কথা শোনেনি। ৪ আগস্ট সকালে কিছু না খেয়েই সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। বাধা দিয়েও তার মা তাকে আটকে রাখতে পারেননি। উল্টো তার মায়ের গালে চুমু খেয়ে বলেছিল- ‘মা আমি ফিরে আসবো’। পরে দুপুর ২টার দিকে তার মা কল দিলেও নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের কারণে তার কথা স্পষ্ট শুনতে পারেননি। তিনি (কাউছার) বলেছিলেন, ‘মা আমি ঝুমুরের সামনে আছি, ভালো আছি।’ বিকেলে খবর আসে কাউছার গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজনের বাধা অতিক্রম করে হাসপাতালে গিয়ে তাকে শুয়ে থাকতে দেখেন তার মা-বোন ও চাচা। কাউছারের সাড়া পেতে অনেক ডাকাডাকি করেন তার মা। কিন্তু সে জেগে ওঠেনি। কারণ সেতো শেষ ঘুমে ঘুমিয়ে আছে।

শহীদ কাউছারের মা জোসনা আক্তার বলেন, কাউছার মেধাবী ছিল। ওর স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হবে। সবসময় এই স্বপ্নের কথা বলতো। ছেলে আমার কবিতা ও গল্পও লিখতো। ওর বাবা স্বপ্ন দেখতো কাউছার উপন্যাস লিখবে। কিন্তু কারোই কোনো স্বপ্ন পূরণ হলো না। ছেলের কবিতা-গল্প পড়ে শূন্যতা ভুলে থাকার চেষ্টা করি। খাবার টেবিলে ছেলেকে না পেয়ে বুকটা ফেটে যায়।

কাউছারের বাবা ইসমাইল হোসেন বলেন, ঘটনার দিন দুপুর দেড়টার দিকে মোবাইলে কাউছারের সঙ্গে শেষ কথা হয়। ছেলে বলেছিল- ‘কোনো সমস্যা নেই, তুমি দোয়া করিও।’ বিকেলে জানতে পারি কাউছার গুলিতে মারা গেছে। মৃত্যুর এক বছর আগে মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে রচনা লিখে কাউছার পুরস্কার পেয়েছিল। কাউছার বলতো ‘বাবা একদিন আমি কবি হবো, উপন্যাস লিখবো। আমার কবিতার বই বের হবে।’ কিন্তু সেদিন ঘর থেকে বের হয়ে আমার কবি ছেলেটা আর ফিরে এলো না। তার লিখে যাওয়া কবিতাগুলো পড়ে শূন্যতা ভোলার চেষ্টা করি।

কাউছারের ছোট ভাই আমিন বিপুল বলেন, আমি গোপনে আন্দোলনে অংশ নিতাম। আম্মুর বাধা উপেক্ষা করে ৪ আগস্ট আন্দোলনে যাওয়ার জন্য বের হই। কিন্তু হাজিরপাড়া বাজারে যুবলীগ ও মান্দারী বাজারে ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়ি। পরে ভাইয়ার (কাউছার) সঙ্গে ফোনে কথা বললে সে আমাকে বাড়ি চলে যেতে বলেছিল। দুপুর আড়াইটার দিকেও ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলেছিলাম- তখন সে জানিয়েছিলেন সে নিরাপদে আছে। তারা আমার ভাইকে বাঁচতে দিলো না। আমরা হত্যার বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, আম্মু অপেক্ষায় ছিলেন ভাইয়া (কাউছার হোসেন বিজয়) দুপুরে ভাত খেতে আসবে। তার সঙ্গে ভাত খাবে। কিন্তু ভাইয়া আর ফিরে আসলো না। আম্মুরও তার সঙ্গে আর খাওয়া হলো না। সেদিন থেকে আম্মু আর ঠিকমতো ভাত খেতে পারেন না। খেতে বসলেই তার ভাইয়ার কথা মনে পড়ে। কারণ সন্ত্রাসীরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেল ভাইয়া।

প্রসঙ্গত, ৪ আগস্ট সকালে মাদাম ব্রিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এসময় সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়ে ও গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিলসহ সেখানে যায়। এতে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ার একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় পিছু হটেন টিপু। পরে তিনি তমিজ মার্কেটের প্লিংকি প্লাজার ছাদে দলবল নিয়ে অবস্থান নেন। টিপু বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি ছোড়েন। থেমে থেমে ৪ ঘণ্টাব্যাপী তারা গুলি চালান। টিপুর গুলি করার একটি ভিডিও তখন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় কাউছারসহ ৪ শিক্ষার্থী নিহত হন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top