১২ ফুট রাস্তার পাশে ১১ তলার অনুমোদন!
প্রকাশিত:
৩১ জুলাই ২০২৫ ১৮:০৭
আপডেট:
৩১ জুলাই ২০২৫ ১৮:২৭

রাজধানীর মাতুয়াইলের শান্তিবাগ স্কুল রোড এলাকায় ১২ ফুট রাস্তার পাশে ১১ তলাবিশিষ্ট একটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ইতোমধ্যে ২য় তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। সেইফ কমিউনিটি গ্রুপ নামের একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান বিশাল এ ভবনটির নির্মাণকাজ তদারকি করছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী ১০ কিংবা তার অধিক তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সামনে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ ফুট চওড়া রাস্তা থাকার কথা। ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য রাস্তার এই ন্যূনতম প্রস্থের পাশাপাশি অন্যান্য কিছু শর্তও পূরণ করতে হয়। এছাড়াও বহুতল ভবনের জন্য ফায়ার সেফটি (অগ্নি নিরাপত্তা) ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক এবং এটি নকশা অনুমোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে- “মাত্র ১২ ফুট রাস্তার পাশে সেইফ কমিউনিটি গ্রুপ নামের ওই ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটি ১১ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেল কীভাবে, অনুমোদনপত্রে রাজউকের কোন কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বাক্ষর করেছে।”
জানা গেছে, জনৈক মহিবুল ইসলাম গং-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২১ সালে গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ ১১ তলাবিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবনের নকশা অনুমোদন দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক, নথি নং-২২৩/২১)। ওই সময় তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে মহিবুল ইসলাম গং স্বাক্ষর করে রাজউকে একটি অঙ্গীকারনামা জমা দেন। অঙ্গীকারনামায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের সকল নিয়ম-কানুন যেমন- বিল্ডিং কোড, ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ঋঅজ) ছাড়াও নিয়ম অনুযায়ী নকশা অনুমোদন করা হয়েছে কিনা, এবং নকশার সকল শর্তাবলী মেনে চলা হচ্ছে কিনা, তাও উল্লেখ ছিলো। তবে ভবন নির্মাণের শুরু থেকেই কোন শর্তই মানেনি সেইফ কমিউনিটি গ্রুপ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনের সামনে তথ্যসম্বলিত সাইনবোর্ডে প্রজেক্টের নাম লেখা আছে সেইফ গার্ডেন- ৫। এছাড়াও ওই ভবনের নকশা, মালিকের নাম ও ঠিকানা, ডেভেলপার/ঠিকাদারের নাম ও ঠিকানা, নির্মাণ কাজের শুরু ও শেষের সম্ভাব্য তারিখ, এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যও সাইনবোর্ডে উল্লেখ করা আছে। তবে অঙ্গীকারনামার শর্ত মোতাবেক ১১ তলা কিংবা তার অধিক তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে চারপাশে যে পরিমাণ জায়গা ছাড়ার কথা ছিলো- তা ছাড়া হয়নি। মোট জমির প্রায় ৯০ ভাগ জায়গা দখল করে নির্মাণ হচ্ছে সেইফ গার্ডেন-৫। অথচ নকশা অনুযায়ী ভবনের চারপাশে ৬০ ভাগ জায়গা ছাড়ার কথা ছিলো। এছাড়াও নকশায় দুটি ভয়েডের কথা উল্লেখ থাকলেও তা রাখা হয় নাই। অপরদিকে রাস্তার জন্য প্রথমে ৪ ফুট জায়গা ছাড়া হলেও পরে আবার ওই ৪ ফুটের ওপরে সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে। ভবনের তিন দিকে মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট জায়গা ছাড়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সেইফ কমিউনিটি গ্রুপের সাইনবোর্ডে উল্লেখিত মোবাইল নাম্বারে (০১৭১৩১৬**৫৪) কল দিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে অপর প্রান্ত থেকে কলটি রিসিভ করে একজন নিজেকে কোম্পানির পরিচালক দাবি করে বলেন, “আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সকল নিয়ম-কানুন মেনেই ভবন নির্মাণ করছি।” তবে শতভাগ নিয়ম মানা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়, দাবি করে তিনি বলেন- “আপনার কিছু জানার থাকলে সরাসরি আমাদের অফিসে আসেন অথবা আপনার কোন প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে দেন।”
এ বিষয়ে রাজউকের সংশ্লিষ্ট জোনের ইমারত পরিদর্শক মলয় চন্দ্র রায়ের মুঠোফোনে কয়েক দফা কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অথরাইজড অফিসার জান্নাতুল মাওয়ার মোবাইলে কল দিলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: