দেশে প্রথমবারের মতো হৃদযন্ত্রের ভেনাস পি-ভালভ প্রতিস্থাপন
প্রকাশিত:
২০ আগস্ট ২০২৫ ১১:০১
আপডেট:
২০ আগস্ট ২০২৫ ১১:১৮

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের চিকিৎসা খাত। এবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে বিনা অস্ত্রোপচারে এক রোগীর দেহে হৃদযন্ত্রের ভেনাস পি-ভালভ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ক্যাথল্যাবে এই প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
এই প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্যের ইভেলিনা চিলড্রেন হাসপাতালের খ্যাতিমান শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ কুরেশি ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নূরুন্নাহার ফাতেমা।
জানা যায়, আজ বুধবার একই হাসপাতালে আরও দুজন রোগীর দেহে ভেনাস পি-ভালভ প্রতিস্থাপন করা হবে। একইসঙ্গে আরেক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত হবে মাই-ভালভ, যা দেশে দ্বিতীয়বারের মতো প্রয়োগ হতে যাচ্ছে।
এই প্রতিস্থাপন উপলক্ষ্যে কিডস হার্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ইন্টারভেনশনাল পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি কংগ্রেসের (এনসিআইপিসি) লাইভ ওয়ার্কশপে দেশি-বিদেশি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জনরা সরাসরি প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করেন। দুই দিনব্যাপী এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকার রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নূরুন্নাহার ফাতেমার উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ কুরেশি, যিনি শিশু হৃদরোগ চিকিৎসায় অবদানের জন্য ‘আজীবন সম্মাননা পুরস্কার’ (লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড) গ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। এ সময় অধ্যাপক কুরেশি তার কর্মজীবনের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পথচলার অনুপ্রেরণামূলক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা তরুণ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুপ্রাণিত করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’র প্রধান কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. ফজিলাতুন্নেসা মালিক, বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরামের (বিএনএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার, বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) মেডিকেল টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সফিউদ্দিন, বিসিপিএস সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ডিএমএস ও কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল শাফি মজুমদার।
বিশেষ অতিথিরা শিশুদের জন্মগত হৃদরোগের চিকিৎসা সুবিধা বিস্তৃত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, প্রতিটি জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। বর্তমানে ঢাকার বাইরে এ ধরনের চিকিৎসা সুবিধা সীমিত থাকায় দেশের অসংখ্য শিশু প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কংগ্রেসে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের উপস্থাপিত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ও আলোচনায় শিশু-হৃদরোগ চিকিৎসায় সর্বশেষ অগ্রগতি, আধুনিক প্রযুক্তি ও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে মতবিনিময় হয়। এছাড়া, আয়োজিত লাইভ ওয়ার্কশপে সরাসরি ক্যাথল্যাব থেকে অত্যাধুনিক চিকিৎসার প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হয়।
কিডস হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক নূরুন্নাহার ফাতেমা সব অংশগ্রহণকারী, আলোচক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই কংগ্রেস বাংলাদেশের শিশু-হৃদরোগ চিকিৎসার উন্নয়ন যাত্রায় একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বুধবার কংগ্রেসের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতে ক্যাথ ল্যাব থেকে জটিল ও আকর্ষণীয় শিশু হৃদরোগের লাইভ কেস সম্প্রচারের মাধ্যমে প্রদর্শিত হবে, যা অংশগ্রহণকারীরা কনফারেন্স হলে বসে পর্যবেক্ষণ করবেন।
মঙ্গলবারের প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া ও লাইভ কর্মশালায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল বিশিষ্ট শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. শিবাকুমারের। তবে যথাসময়ে উপস্থিত হতে না পারায় অংশ নিতে পারেননি তিনি। আজ বুধবার নির্ধারিত বাকি তিন প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ায় যোগ দেবেন তিনি।
এসএন/রুপা
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: