ফরিদপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ
পিস্তল হাতে ছবি ভাইরাল, ২ দিনেও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ
প্রকাশিত:
৯ নভেম্বর ২০২৫ ১০:৪৫
আপডেট:
৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:৫০
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শনের দৃশ্য দেখা গেছে। এ ছাড়া, আগ্নেয়াস্ত্র (পিস্তল সদৃশ বস্তু) হাতে এক যুবকের ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ বলছে—দুই দিন ধরে তার পরিচয় খুঁজছেন তারা। তবে ওই ব্যক্তিটি কে, তা এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি আজ রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়ার নেতৃত্বে বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত।
গত ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দুই পক্ষ। ওইদিন বিকেলে বোয়ালমারী পৌরসভার সামনে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে এলে পরস্পরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এরপর নাসিরুলের সমর্থকরা হারুন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। তারা ওই ভবনের নিচতলায় শামসুদ্দিন মিয়ার কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। এ ছাড়া, আশপাশের বিভিন্ন দোকানে ভাঙচুর চালান। এ সময় হামলাকারীদের হাতে রামদা, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র দেখা যায়।
এ ঘটনায় পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন কর্মী-সমর্থক আহত হন।
সংঘর্ষের সময় ধারণকৃত একটি ভিডিও ফুটেজে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এক যুবককে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে দেখা যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি সাদা ব্যাগ থেকে তিনি পিস্তল সদৃশ বস্তু বের করে আবার তাৎক্ষণিক ওই ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখছেন। ভিডিওটির যে অংশে পিস্তল সদৃশ বস্তুটি বের করা ও ব্যাগের ঢোকানোর দৃশ্য বোঝা যায়, সেই ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ও কয়েকটি স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই শোডাউনটি করেন খন্দকার নাসিরুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা এবং আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবকের নাম শাহ মো. জাকারিয়া কাজী (২৫)। তিনি বোয়ালমারীর গুনবহা ইউনিয়নের উমরনগর গ্রামের মঞ্জুর কাজীর ছেলে এবং খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক। এ ছাড়া, তিনি উপজেলা জিয়া প্রজন্ম দলের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সঙ্গে। তার সমর্থকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন—সেটি আসল আগ্নেয়াস্ত্র নয়। তিনি বলেন, ওই ভিডিওটিতে যা দেখা গেছে সেটি আসল আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। তবে যদি কারও কাছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থেকেই থাকে, পুলিশ সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।
এদিকে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনায় উপজেলাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে অভিযোগ করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু। তিনি অভিযোগ করে বলেন, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম শান্ত বোয়ালমারীকে অশান্ত করে তুলেছেন। সংঘর্ষে নাসিরুলের দুইজন সমর্থকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে।
তিনি বলেন, নাসিরুল পূর্ব থেকেই এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং অস্ত্রধারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে রোববার বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেন, ওই ভিডিও এবং ছবি আমি দেখেছি। তবে ওই ব্যক্তিটি কে, তা এখনও শনাক্ত করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র সদৃশ বস্তু বহনকারী ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তে আমরা কাজ করছি। এটি শনাক্ত করে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পর্কিত বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: