প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জামায়াত আমিরের
প্রকাশিত:
৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:৫৭
আপডেট:
৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৫২
রাজধানীতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের একটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) স্কুলটিতে তিনি শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান এবং তাদের শিক্ষাদান ও পরিচর্যার সামগ্রিক পরিবেশ প্রত্যক্ষ করেন।
পরিদর্শনকালে তিনি অভিভাবক, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও শিক্ষকদের অভিব্যক্তি, প্রয়োজন ও চ্যালেঞ্জগুলো মনোযোগ সহকারে শোনেন।
এ সময় জামায়াত আমির বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের নিষ্পাপ হাসি, শিক্ষার প্রতি আগ্রহ এবং অনন্ত সম্ভাবনা আমার হৃদয় গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক, শিক্ষক ও অভিভাবকদের ত্যাগ, মমত্ববোধ ও ধৈর্য সত্যিই প্রশংসনীয়। তাদের ধৈর্য, ত্যাগ ও নিষ্ঠাকে সমাজের জন্য অনুকরণীয়। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, আমি তাদের প্রতিবন্ধী বলবো না, যদিও এখানে লেখা আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। আমি বলবো ‘স্পেশাল নিড বেবিজ’- যাদের প্রতি সমাজের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
এই স্পেশাল নিড বেবিদের ব্যাপারে একজন মা বলেছেন, ‘আমার সমাজ তো আমাকে দেখেই একটু অন্যভাবে, স্বয়ং আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনও আমাকে ভিন্নভাবে দেখে।’
জামায়াত আমির বলেন, আসলে এইগুলা আমাদের অজ্ঞতা, মূর্খতা। আমরা যদি অন্যভাবে দেখতাম, তাহলে দেখতাম যে এই মা বিশাল একটা সামাজিক দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের সবার উচিত তাকে সম্পূর্ণ সমর্থন সহযোগিতা করা। তিনি যাতে আরও সুন্দরভাবে ঐ বেবিটাকে আদরে, যত্নে, ভালোবাসায় বড় করতে পারেন। এখানে সমাজের দায়িত্ব, সমাজের এই বাচ্চাদেরকে বাছাই করে যার যেদিকে সম্ভাবনা আছে, তাকে সেইদিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখি একটা কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার, কল্যাণ মানে- সবার জন্য কল্যাণ। অভিজাত শ্রেণিও এখান থেকে কল্যাণ লাভ করবে, আবার সমাজে যারা বঞ্চিত এবং পিছিয়ে পড়া তারাও কিন্তু এখান থেকে কল্যাণ পাবে। যেখানে কল্যাণ রাষ্ট্র আছে, সেখানে এই ধরনের স্পেশাল নিড বেবির জন্য একজন মানুষকে তারা নিয়োগ দেয়, তার পুরো বেতন ভাতা, সুবিধাদি সব সরকার বহন করে। এ ব্যক্তিটা মাও হতে পারে, ঐ সন্তানের বাবা কিংবা ভাইও হতে পারে।
সব নাগরিককে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সংবেদনশীল, দায়িত্বশীল ও সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এবং মানবিক সমাজ গঠনে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
পরিদর্শনকালে সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. ইঞ্জিনিয়ার জুবায়ের আহমেদ এবং খিলক্ষেত থানা আমির হাসনাইন আহমেদ।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষ্যে আজ (৩ ডিসেম্বর) জামায়াত আমির গনমাধ্যমে বাণীও দিয়েছেন।
এতে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে দেশের সব প্রতিবন্ধী নাগরিক, তাদের পরিবার, পরিচর্যাকারী, শিক্ষক, পুনর্বাসনকর্মী ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা, সমবেদনা ও অবিচল সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি।
জামায়াত আমির বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, চিকিৎসা, চলাচল, কর্মসংস্থান, পুনর্বাসন, নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষাসহ তাদের সব মৌলিক মানবিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ইনক্লুসিভ এজুকেশন, অ্যাক্সেসিবল অবকাঠামো, সহায়ক প্রযুক্তি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং পরিবারভিত্তিক সাপোর্ট সিস্টেম আরও জোরদার করতে হবে। পরিবারগুলোর মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক চাপ কমাতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে এবং মানবিক সমাজ গঠনে নাগরিক পর্যায়ে সংবেদনশীলতা, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব আরও প্রসারিত হওয়া জরুরি।
সেই সঙ্গে ভালোবাসা, সুবিচার ও মানবিকতার আলোকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এক মর্যাদাপূর্ণ, নিরাপদ এবং সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নির্মাণে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সম্পর্কিত বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: