মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১


আইনি দিক খতিয়ে দেখছে বিএনপি


প্রকাশিত:
১১ মে ২০২১ ১৬:২৬

আপডেট:
১১ মে ২০২১ ১৮:১৬

খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

উন্নত চিকিৎসার জন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে পরিবারের করা আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় বিএনপি হতবাক হয়েছে। তবে আইনগতভাবেই বিদেশে তিনি চিকিৎসা নিতে পারবেন বলে মনে করছে দলটি। এজন্য আইনগত দিক খতিয়ে দেখার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

পাশাপাশি স্বাধীনতার পর দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন- এ রকম নজিরও খোঁজা হচ্ছে। দণ্ড মওকুফের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন থাকলেও দলটির নেতারা মনে করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন তা কখনোই করবেন না। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া না হলেও নিজের ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে রাজি নন তিনি।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের আবেদন রোববার নাকচ করে দিয়েছে সরকার। এরপর বিকল্প নানা উদ্যোগ নিয়ে ভাবছে দলটির হাইকমান্ড। পরবর্তী করণীয়সহ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও সার্বিক বিষয় নিয়ে আজ মঙ্গলবার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে।

বিদেশে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের অনুমতি না দেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এটা যতটা না আইনি তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিদেশ যেতে পারবে না বলে সরকারের দিক থেকে যে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে তা সঠিক নয়।

তাহলে সাজাপ্রাপ্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা মুহম্মদ নাসিম কীভাবে ২০০৮ সালে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েছিলেন? তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে সাজাপ্রাপ্ত হয়েও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন- এমন বহু নজির রয়েছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা খালেদা জিয়া স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, জনবিচ্ছিন্ন সরকার তার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায় এটা আবারও প্রমাণিত হলো।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীরউত্তম) বলেন, খালেদা জিয়া কোনোদিন ক্ষমা প্রার্থনা (মার্সি পিটিশন) করবেন না। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবেন কিন্তু তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করার লোক নন। বিচারিক আদালতে সাজা হয়েছে। উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন। তিনি তো চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত হননি। সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা প্রার্থনা করতে যাবেন কেন? তিনি কি চুরি করেছেন? জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট বা অন্য কিছুর ওপরে তাকে অভিযোগ করা হয়েছে।

কিন্তু এ টাকা তো তিনি মারেননি। সে টাকা তো ব্যাংকে পড়ে আছে। তিনি আরও বলেন, সরকার মনে করে খালেদা জিয়াকে এ মুহূর্তে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলে সরকারের জন্য একটা হুমকি (থ্রেট) হতে পারে। এজন্য তাকে বিদেশে পাঠানো যাবে না। যদিও এ সরকারের আমলে ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের অনেককে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার মাধ্যমে দণ্ড বাতিল করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার তো ১০ বছরের কারাদণ্ড।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, একটা প্রশ্ন- আপনারা উচ্চ আদালতে যান না কেন। আমি মনে করি আদালতের ওপর খালেদা জিয়ার কিছুটা আস্থার অভাব রয়েছে। কেননা পাঁচ বছর সাজার মামলায় তাকে হাইকোর্ট জামিন দেননি। উচ্চ আদালতে যাবেন কী যাবেন না তা খালেদা জিয়ার ওপর নির্ভর করে। তিনি আরও বলেন, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে আইনগত কোনো বাধা থাকতে পারে না। এটা সম্পূর্ণভাবে সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে আইনি বাধার কথা আইন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে চিকিৎসার নজির এ দেশে রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রবকে ১৯৭৯ সালে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানি পাঠানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে মানবিক বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছিল সবার আগে। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও তেমনটি আশা করেছিলাম। কিন্তু রোববার সরকারের পক্ষ থেকে যা করা হয়েছে তাতে বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন।

এদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সদ্য করোনামুক্ত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও তিনি ঝুঁকিমুক্ত নন। চিকিৎসকরা জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীর শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দিয়ে থাকে। তার ক্ষেত্রেও সে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও করোনা-পরবর্তী জটিলতায় রোগীর শারীরিক অবস্থা বিভিন্ন দিকে টার্ন নিচ্ছে। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার মতো এমন বয়স্ক রোগীর করোনা-পরবর্তীতে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এছাড়া আগে থেকে তার বেশকিছু রোগও আছে। জেলখানা যাওয়ার পর সেগুলো আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে তার শারীরিক অবস্থা ভালো বলা যাবে না।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া না হলে এভারকেয়ারের সিসিইউতেই আপাতত থাকছেন তিনি। তার ঈদুল ফিতরও কাটবে হাসপাতালে।

খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশযাত্রার অনুমতি না দেওয়ায় পরিবারের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন দলের নেতাকর্মীরা। হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ার বিষয়ে যতটা আইনি দিক রয়েছে, তার চেয়ে রাজনীতি রয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়াকে ‘ভিত্তিহীন’ মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করার অর্থ হচ্ছে- তাকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া। যে ষড়যন্ত্র ওয়ান-ইলেভেনের সময় থেকে হয়ে আসছে।

বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত অমানবিক : খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়া অমানবিক ও নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম ও মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ।

সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা না দিয়ে তার ওপর সরকার অন্যায়-অবিচার করেছে। এলডিপির আরেক অংশের সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, সরকারেরর সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো তারা কতটা অমানবিক।

গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই অমানবিক ও নিবর্তনমূলক।

উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তাফা জামাল হায়দার ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আহসান হাবীব লিংকন এক বিবৃতিতে বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা বেশ সঙ্কটাপন্ন। বর্তমান সরকার তার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, তার পরিবারের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী চিকিৎসা, এমনকি বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা পাওয়া একটা মানবিক অধিকার। এ অধিকারে রাজনৈতিক বাধা দেওয়া ভীষণ অন্যায় কাজ।

এছাড়া পৃথক বিবৃতিতে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, বর্তমান সরকার মহামারি করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিষয়টি মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে পারত। তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়াটা সত্যিই বেদনাদায়ক, অমানবিক ও নজিরবিহীন ঘটনা।

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ার যুক্তি তুলে ধরে রোববার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ও দণ্ডাদেশ স্থগিত করে যেভাবে তাকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তাতে এখন আর তাকে বিদেশে যেতে দেওয়ার সুযোগ নেই।


সম্পর্কিত বিষয়:

করোনা

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top