শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


সীমান্তে নন-লেথাল নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত বিএসএফের


প্রকাশিত:
১৫ জুন ২০২৩ ২৩:২৬

আপডেট:
১০ মে ২০২৫ ০৩:২৩

ছবি সংগৃহিত

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বলেছেন, সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে নন-লেথাল নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএসএফ। ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে রাত্রিকালীন যৌথ টহল বৃদ্ধি করা হবে।

সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশের বন্ধ করা উন্নয়নমূলক ৫টি কাজ পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে সায় দিয়েছে বিএসএফ।

এগুলো হলো, রামগড় স্কুল বিল্ডিংয়ের অসম্পন্ন কাজ; তিন বিঘা করিডোর এলাকায় ঝালংগী পকেট এবং ভিতরবাড়ি পকেট এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন; শেরপুর জেলার ভোগাই নদীর তীর সংরক্ষণ; জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদী ও রহিমপুর খালের সংযোগস্থল পুনঃখনন এবং নেত্রকোণা জেলার ভবানীপুর সীমান্তে ১.৪৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ।

সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন শেষে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বিকেলে বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিজিবি মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, পূর্বানুমতি ছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ শুরু না করার ব্যাপারে পারস্পরিক সম্মতি হয় উভয় বাহিনীর মধ্যে। এছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজ জয়েন্ট ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে সম্মতি পাওয়া গেছে।

বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, এবারের সম্মেলনে সব থেকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বন্ধ থাকা উল্লেখযোগ্য ৫টি কাজ চালু করার ব্যাপারে অনুমোদন।

এসব উন্নয়নমূলক কাজগুলো সীমান্তবর্তী জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলেও জানান বিজিবি মহাপরিচালক।

মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান আরও বলেন, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ যেমন- মাদক পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানবপাচার, স্বর্ণ, অস্ত্র, জাল মুদ্রার নোট প্রভৃতি চোরাচালান রোধে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর উভয় পক্ষ থেকে গুরুত্বারোপ করা হয়। উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে উভয়পক্ষ কর্তৃক তথ্য আদান প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে অপরাধীদের সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে মাঠ পর্যায়ে শেয়ার করতেও উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে উভয় দেশের নাগরিকদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম রোধকল্পে সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ব্যাপারে উভয় পক্ষ গুরুত্বারোপ করেছে।

বিজিবি জানিয়েছে, ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৩তম সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে, বিএসএফ মহাপরিচালক ড. সুজয় লাল থাওসেনের নেতৃত্বে ভারতের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন।

সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা নিরসন, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক পাচার, মানব পাচার রোধ, স্বর্ণ ও অস্ত্র চোরাচালান রোধসহ বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি ও আস্থা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়।

চার দিনব্যাপী অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা শেষে ১৪ জুন যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরিত হয়।

এবারের সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা/আহতের ঘটনা বন্ধ করা। এ প্রসঙ্গে বিএসএফকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনার জন্য আহ্বান জানান বিজিবি প্রধান। সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিএসএফ মহাপরিচালক আন্তরিকতার সঙ্গে আশ্বাস দেন। এক্ষেত্রে বিএসএফ এর পক্ষ থেকে নন-লেথাল নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

ভারতে বসবাসকারী বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের ভারত হতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধে বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি উভয় দেশের দালাল চক্র দমনে পরস্পরকে সহায়তা দিতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়।

বাংলাদেশ থেকে বম জনগোষ্ঠী ভারতের মিজোরামে চলে যাচ্ছে বলে বিএসএফ কর্তৃক তথ্য উপস্থাপন করে সম্মেলনে।

এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক জানান, ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের কারণে ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেরই পার্বত্য সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এই ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। উভয় দেশে তাদের আত্মীয়-পরিজনরা বসবাস করছে। সম্প্রতি পাহাড়ি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি দমনে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অবস্থানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান। অপপ্রচারের অংশ হিসেবে কিছুসংখ্যক ব্যক্তিকে কেএনএ সন্ত্রাসীগোষ্ঠী জোরপূর্বক মিজোরামে পাঠিয়ে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে জাতীয়তা নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে।

বিএসএফ মহাপরিচালক সন্দেহভাজন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিজিবি ও বাংলাদেশের অন্যান্য বাহিনীর গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবি মহাপরিচালক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা উল্লেখ করে জানান, বাংলাদেশ কখনও তার ভূমি অন্য কোন রাষ্ট্রের সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর প্রয়োজনে ব্যবহারের সুযোগ দেয় না; ভবিষ্যতেও দেবে না।

এ প্রসঙ্গে বিজিবি কর্তৃক ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠীর অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে বিএসএফ হতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করা হয়। উভয়পক্ষ আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হয়।

বিজিবি মহাপরিচালক বাংলাদেশে সীমান্তের অভ্যন্তরে ভারতের কিছু সংখ্যক অপ্রত্যাশিত টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের নেতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরেন এবং এবিষয়ে বিএসএফকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। একইভাবে বিএসএফ মহাপরিচালকও ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক বিস্তারের বিষয়টি তুলে ধরেন। উভয়পক্ষ দুই দেশের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সুবিধা ব্যবহার করে সীমান্তে সংগঠিত অপরাধ রোধে সংশ্লিষ্ট দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে একমত হয়।

বিজিবি মহাপরিচালক ভারতের আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে প্রবাহিত চারটি খালের মাধ্যমে বর্জ্য পানি নিষ্কাশন ফলে বাংলাদেশ অংশে পরিবেশ দূষণ রোধে ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপনের কথা পুনর্ব্যক্ত করলে বিএসএফ বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top