শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ফেসবুকে সমকামিতার ফাঁদ

সাক্ষাতে ডেকে জিম্মি, মুক্তিপণ না পেয়ে লাশ ফেলা হয় সেপটিক ট্যাংকে


প্রকাশিত:
১৮ মে ২০২৩ ২১:১২

আপডেট:
১০ মে ২০২৫ ১৯:৪৯

 ফাইল ছবি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘কষ্টের জীবন’ নামে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে সমকামিতার প্রস্তাব দিতেন তারেক। প্রথমে আগ্রহী তরুণদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতেন।

এরপর সাক্ষাতের জন্য গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় ডেকে এনে জিম্মি করে আদায় করতেন মোটা অংকের টাকা। টাকা না দিলে ব্লাকমেইলের হুমকি ও নির্যাতন করত তারেকের চক্র।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে এই চক্রের ডাকে ঢাকায় আসেন আমির হোসেন (২৫) নামে এক তরুণ। চক্রের ফাঁদে পড়ে দেখা করতে গিয়ে জিম্মি হন। মুক্তিপণ চাওয়া হয় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু মুক্তিপণ না পেয়ে আমিরকে হত্যা করে মরদেহ গুম করা হয়।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে বুধবার (১৭ মে) নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা তারেকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির দক্ষিণখান থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন, চক্রের মূলহোতা মো. তারেক ওরফে তারেক আহাম্মেদ (৩১), মোহাম্মদ হৃদয় আলী (২৯), আশরফুল ইসলাম (২৩), রাসেল সরদার (২৫) ও তৌহিদুল ইসলাম বাবু (৩০)।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।

তিনি বলেন, ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা আবু তাহেরের ছেলে আমির হোসেন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ঢাকা আসেন। এরপর ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণখান থানার আশকোনা মেডিকেল রোডে আমিরের বড় বোন নুরনাহার বেগম (৩৪) বাসায় ওঠেন।

২৮ ডিসেম্বর আমিরের ছোট বোন কামরুন্নাহারকে (২২) চক্রের সদস্যরা তার ভাইয়ের মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি চেয়ে ফোন করেন।

ওই ঘটনায় আমিরের বড় ভাই বিল্লাল হোসেন (৪০) দক্ষিণখান থানায় ওই দিনই একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি সূত্রে অপহৃত আমিরের খোঁজে মাঠে নামে পুলিশ। গত ১৩ এপ্রিল বিল্লাল থানায় অপহরণ মামলার দায়ের করেন।

ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও চতুর। তাদেরকে শনাক্ত করতে বেশ কয়েকবার কৌশল পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় চক্রের সদস্য আশরাফুল ইসলামকে সাভারের জিরাবো এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তিনজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল (বুধবার) নোয়াখালীর দুর্গম হাতিয়া দ্বীপে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা তারেক আহাম্মেদ ও তার সহযোগী মোহাম্মদ হৃদয় আলীকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণখান থানার বিশেষ একটি দল।

ডিসি-উত্তরা বলেন, গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার একটি বাড়ির পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে অপহৃত আমিরের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পলিথিনে মোড়ানো বস্তাবন্দি গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মূলহোতা তারেককে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে ডিসি মোর্শেদ আলম জানান, মূলহোতা তারেকের ‘কষ্টের জীবন’ নামের একটি ফেক ফেসবুক আইডি ছিল। সেটি ব্যবহারে বিভিন্ন সময় ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সমকামিতার প্রস্তাব দিতেন। তার প্রস্তাবে রাজি হওয়া তরুণদের গাজীপুরের চৌরাস্তা, শ্রীপুর ও মাওনাসহ বিভিন্ন এলাকায় সাক্ষাতের জন্য ডাকা হতো।

এরপর মোবাইল ও টাকা কেড়ে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিতেন। ঠিক এভাবেই নিহত আমিরকে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে গাজীপুর চৌরাস্তায় ডেকে আনেন তারেক। আমির তার বোনের বাসা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তায় গেলে তারা তাকে জিম্মি করেন। পরে তার বোনের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি।

মুক্তিপণ না পাওয়ায় ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমিরকে হত্যা করা হয়। এরপর বস্তায় লাশ ভরে বাসার পেছনে পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রেখে আত্মগোপনে চলে যায় তারা।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top