মঙ্গলবার, ৯ই ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে ছড়িয়ে পড়ছে সংঘাত, এ পর্যন্ত নিহত ৭


প্রকাশিত:
৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৪৪

আপডেট:
৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:০২

ফাইল ছবি

চার মাস স্থিতাবস্থা চলার পর গত রোববার থেকে সীমান্ত এলাকায় ফের সংঘাত শুরু হয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে। সংঘাতের দু’দিনে ইতোমধ্যে দু’দেশে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭ জন।

নিহত এই ৭ জনের মধ্যে ৬ জন কম্বোডিয়ার একজন থাইল্যান্ডের। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ সোমবার রাতে সীমান্ত এলকায় থাই বাহিনীর ছোড়া গোলায় নিহত হয়েছেন ২ জন বেসামরিক। এর ফলে সংঘাতের দু’দিনে মোট নিহত বেড়ে পৌঁছেছে ৬ জনে। আর থাইল্যান্ডে নিহত হওয়া ব্যক্তি দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য।

এদিকে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেছেন, “থাইল্যান্ড সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের নাটক সাজিয়ে কম্বোডিয়ার সাধারণ বেসামরিক গ্রামবাসীদের ওপর হামলা চলাচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”

এদিকে মঙ্গলবার সকালে এক বিবৃতিতে থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর জানিয়েছে, দেমটির উপকূলবর্তী ত্রাত প্রদেশের জলসীমায় কম্বোডিয়ার সেনা উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের ধাওয়া দিয়েছে থাই নৌ সেনারা। এতে কম্বোডীয় বাহিনীর সদস্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।

আরও বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের স্থল ও জল সীমান্তে ভারী অস্ত্র এবং স্নাইপার শ্যুটার মোতায়েন করছে কম্বোডিয়া বাহিনী, সুরক্ষিত অবস্থান উন্নত করছে এবং স্থল সীমান্ত এলাকায় পরিখা খনন করছে

কম্বোডীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর এসব তৎপরতাকে আমরা থাইল্যান্ডের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি এবং গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছি,” বলা হয়েছে থাই নৌবাহিনীর বিবৃতিতে।

প্রসঙ্গত, এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল বা পান্না ত্রিভুজ নামের একটি ভূখণ্ড নিয়ে ১১৮ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমানা মিলিত হয়েছে পান্না ত্রিভুজে। প্রাচীন মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপনাসমৃদ্ধ পান্না ত্রিভুজকে থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া উভয়েই নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে।

এই সংকটের সূত্রপাত গত শতকের প্রথম দশকে। সে সময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল কম্বোডিয়া। ১৯০৭ সালে কম্বোডিয়ার একটি মানচিত্র প্রকাশ করে ফ্রান্স, সেখানে পান্না ত্রিভূজকে কম্বোডীয় ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ও প্রদর্শন করা হয়। সেই সময়েই এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল থাইল্যান্ড।

১৯৫৩ সালের ৯ নভেম্বর ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হয় কম্বোডিয়া; কিন্তু স্বাধীনতার পরও পান্না ত্রিভূজকে নিজেদের দখলে রাখে দেশটির সরকার। ফলে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয়নি দেশটির।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সীমান্ত সংঘাতের পর ১৫ বছর আগে যুদ্ধবিরতিতে গিয়েছিল দুই দেশ। কিন্তু গত বছর মে মাস থেকে উত্তেজনা শুরু হয় দু’দেশের মধ্যে। এই উত্তেজনার জের ধরে গত জুলাই মাসের শেষ দিকে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে থাই ও কম্বোডীয় সেনাবাহিনী। ৫ দিনের সেই সংঘাতে নিহত হয়েছিলেন দুই দেশের ৪৮ জন নাগরিক এবং বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানের উদ্দেশে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন ৩ লাখ মানুষ। পরে যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ।

এরপর চার মাসেরও বেশি সময় শান্ত থাকার পর গত রোববার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার পর সীমান্তবর্তী থাই প্রদেশ সি সা কেত-এ ফের সংঘাত উসকে ওঠে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে।

এক প্রতিবেদেনে থাই দৈনিক ব্যাঙ্কক পোস্ট জানিয়েছে, রোববার জাতিসংঘে কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিল থাইল্যান্ড। সেখানে বলা হয়েছিল থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত এলাকায় থাই ভূখণ্ডে গোপনে বড় এলাকা জুড়ে ল্যান্ডমাইন পেতেছে কম্বোডিয়া। এসব ল্যান্ডমাইনের বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন থাই ও চীনা নাগরিক আহত হয়েছেন। জাতিসংঘকে এ ঘটনা তদন্তের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল থাই সরকার।

জাতিসংঘে থাইল্যান্ড এ অভিযোগ জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫মিনিটে সি সা কেত প্রদেশের সীমান্ত লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে কম্বোডীয় সেনাবাহিনী। এতে দু’জন থাই সেনা আহত হন

অতর্কিত এই হামলার জবাবে কম্বোডিয়ায় বিমান অভিযান পরিচালনা করে থাই প্রতিরক্ষা বাহিনী। তারপর থেকেই পুরোদমে শুরু হয় সংঘাত।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top