আদালতের রায়ের পর ভারতকে সিন্ধু চুক্তিতে ফেরার আহ্বান পাকিস্তানের
প্রকাশিত:
১২ আগস্ট ২০২৫ ১৬:০৫
আপডেট:
১২ আগস্ট ২০২৫ ১৯:২১

আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পর ভারতে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তিতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এক্সবার্তায় বলা হয়েছে, “আন্তর্জাতিক সালিশী আদালত নির্দেশ দিয়েছেন যে সিন্ধু নদীর পানিপ্রবাহ ভারতকে বাধামুক্ত রাখতে হবে। বিশেষ করে সিন্ধু অববাহিকার পশ্চিমাঞ্চলীয় ৩ নদী, যেগুলো পাকিস্তানের ভূখণ্ডে পড়েছে— সেগুলোতে পানির প্রবাহকে মুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে আদালত ভারতকে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তিতে ফিরে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন।”
“পাকিস্তান প্রত্যাশা করছে যে ভারত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্বাভাবিক করার কার্যক্রম শুরু করবে এবং বিশ্বস্ততার সঙ্গে চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করবে। আমরা ভারতেকে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তিতে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”
গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের পেহেলগামে ভয়াবহ এক জঙ্গি হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি পর্যটক নিহত হন। পরে পাকিস্তানি কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট এ হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়।
পেহেলগামে হামলার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে ভারত। এর ফলে পাকিস্তানের তিন নদী সিন্ধু, চেনাব এবং ঝিলামের পানি প্রবাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়ে দেশটির কৃষি উৎপাদন।
ভারত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পর আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতে (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন-পিসিএ) মামলা করে পাকিস্তান। ০৮ আগস্ট সেই মামলা রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে আদালত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি সচল করা এবং ভারতকে এই চুক্তিতে ফিরে আসার নির্দেশ দেন।
আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এই রায়ের পর ভারত এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে পাকিস্তান স্বাভাবিক কারণেই স্বাগত জানিয়েছে এই রায়কে।
সিন্ধু পানি চুক্তি কী
ভারতের উজান থেকে পাকিস্তানের সিন্ধু অববাহিকায় প্রবাহিত নদীগুলোর পানি ব্যবহার নিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের।
সিন্ধু পানি চুক্তি অনুসরণ করেই এসব নদীর পানি ব্যবহার করা হয়। ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় এ চুক্তি হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান তাতে স্বাক্ষর করে।
চুক্তিটির মাধ্যমে সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর পানিকে দুই দেশের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয় এবং পানিবণ্টনের নিয়ম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সিন্ধু অববাহিকার পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি নদী ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রুর পানি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয় ভারতকে। আর পাকিস্তানকে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদ-নদী সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাবের অধিকাংশ পানি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
চুক্তিটি কোনো দেশ একতরফাভাবে স্থগিত বা বাতিল করার বিধান নেই। বরং এতে সুস্পষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
সিন্ধু, ঝিলাম এবং চেনাব নদীগুলোর প্রবাহ পাকিস্তানের কৃষি, শহর এবং জ্বালানি ব্যবস্থার মূল। এই মুহূর্তে, পাকিস্তানের জন্য এই পানির কোনো বিকল্প নেই। পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এবং এটি প্রায় সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর নিশ্চিত প্রবাহের ওপর নির্ভর করে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: