পারমাণবিক সাবমেরিন শক্তিতে কে এগিয়ে? যুক্তরাষ্ট্র নাকি রাশিয়া
প্রকাশিত:
২ আগস্ট ২০২৫ ১৫:২৯
আপডেট:
২ আগস্ট ২০২৫ ১৯:০৬

দুটি পারমাণবিক সাবমেরিনকে অবস্থান বদলে রাশিয়ার কাছাকাছি মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ‘উসকানিমূলক’ মন্তব্যে চটে গিয়ে এ নির্দেশ দেন তিনি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১ আগস্ট) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দিয়ে ট্রাম্প জানান, এ সপ্তাহে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভের ‘খুবই উসকানিমূলক মন্তব্যের’ পরিপ্রেক্ষিতে সাবমেরিন দুটির অবস্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে।
যদিও ক্রেমলিন এখনো ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই হুমকির জবাব দেয়নি। তবে একজন সিনিয়র রুশ আইনপ্রণেতা ভিক্টর ভোডোলাটস্কি সতর্ক করে বলেন, রাশিয়ার কাছাকাছি যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলে তাদের মোকাবেলা করার জন্য বিশ্বের মহাসাগরে তাদের আরও পারমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে।
এ পরিস্থিতে প্রশ্ন উঠেছে গভীর সমুদ্রে কার শক্তি কেমন। যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার সাবমেরিন বহরের দিকে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক—
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সাবমেরিন বহর
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ওহাইও-শ্রেণির ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন (এসএসবিএন) ‘বুমার’ নামে পরিচিত। এই সাবমেরিনগুলোর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য-অত্যন্ত নিঃশব্দে চলাচল এবং নির্ভুলভাবে পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগে সক্ষমতা। বর্তমানে কমপক্ষে ১৪টি ওহাইও ক্লাস সাবমেরিন যুক্তরাষ্ট্রের বহরে আছে। এগুলো টানা ১৫ বছর ধরে বড় ধরনের সংস্কারে ছাড়াই কাজ করতে পারে। প্রতিটি সাবমেরিন সর্বোচ্চ ২০টি নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এসএলবিএম) বহন করতে পারে। এর প্রধান অস্ত্র ট্রাইডেন্ট-২ ডি ৫ ক্ষেপণাস্ত্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিন ধরনের পারমাণবিক শক্তিচালিত আক্রমণাত্মক সাবমেরিন (এসএসএন) রয়েছে- ভার্জিনিয়া-ক্লাস, সিউলফ-ক্লাস এবং লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাস (যা ৬৮৮ ক্লাস নামেও পরিচিত)। এই সাবমেরিনগুলো টমাহক মিসাইল, হারপুন মিসাইল এবং এমকে-৪৮ টর্পেডো বহন করতে পারে। এই আক্রমণাত্মক সাবমেরিনগুলো শত্রু পক্ষের জাহাজগুলোকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এগুলো গোয়েন্দা তথ্য, গুপ্তচরবৃত্তি এবং নজরদারি অভিযান পরিচালনা এবং মাইন যুদ্ধেও ব্যবহৃত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আধুনিক আক্রমণ সাবমেরিন সিরিজ হলো ভার্জিনিয়া-ক্লাস। এর মধ্যে ইউএসএস হাওয়াই, ইউএসএস নর্থ ক্যারোলিনা, ইউএসএস মিজৌরি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে ২৪টি ভার্জিনিয়া-ক্লাস সাবমেরিন যুক্তরাষ্ট্রের বহরে রয়েছে। এটি বিশেষ অভিযান পরিচালনায় সক্ষম এবং ডুবুরিদের জন্য লক-ইন/লক-আউট চেম্বার রয়েছে এতে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিউলফ-ক্লাস সাবমেরিন রয়েছে তিনটি। এই সাবমেরিনে উল্লম্বভাবে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ব্যবস্থা নেই। তবে এতে আটটি টর্পেডো টিউব রয়েছে এবং টর্পেডো রুমে ৫০টি অস্ত্র রাখা যায়। লস অ্যাঞ্জেলেস বা ৬৮৮ ক্লাস সাবমেরিন এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন বহরের মূলভিত্তি। অন্তত ২৪টি এ সিরিজের সাবমেরিন এই মুহূর্তে সক্রিয়।
১৯৭৬ সালে সোভিয়েত হুমকির পাল্টা হিসেবে তৈরি হওয়া এই সাবমেরিনগুলো উচ্চ গতি, নিঃশব্দ চলাচল এবং নির্ভরযোগ্যতার জন্য বেশ কার্যকর। এ ক্লাসের সাবমেরিনগুলো পর্যায়ক্রমে অবসরে যাওয়ার পর ভার্জিনিয়া-ক্লাস তা প্রতিস্থাপন করবে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বহরে সাবমেরিনের সংখ্যা অন্তত ৫১টি।
রাশিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন বহর
অন্যদিকে রাশিয়ার সাবমেরিন বহর বিশ্বের বৃহত্তম সাবমেরিন বলা যায়। প্রায় ৬৪টি সাবমেরিন রয়েছে রাশিয়ার বহরে। এর মধ্যে প্রায় ১৪টি ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন (এসএসবিএন) রাশিয়ার কৌশলগত ব্যবস্থার মূলভিত্তি। এর মধ্যে রয়েছে বোরেই-ক্লাস এবং ডেল্টা ৪-ক্লাস।
রাশিয়ার সবচেয়ে আধুনিক এসএসবিএন হচ্ছে বোরেই-ক্লাস। বর্তমানে আটটি বোরেই ক্লাস সাবমেরিন আছে। এতে ১৬টি বুলাভা এসএলবিএম এবং ৬টি ৫৩৩ মিলিমিটার টর্পেডো লঞ্চার রয়েছে। এছাড়া এটি অ্যান্টি-সাবমেরিন রকেট ও তলদেশে পুঁতে রাখা মাইন নিক্ষেপেও সক্ষম। প্রতিটি সাবমেরিনে এক শতাধিক নাবিক থাকে।
রাশিয়ান নৌবাহিনীর বহরে চারটি ইয়াসেন-শ্রেণির পারমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে। এটি আকারে ছোট এবং ক্রুদের সংখ্যাও কম। এই শ্রেণির সাবমেরিনে পাঁচটি ৩এম৫৪-১ ক্যালিবার ক্ষেপণাস্ত্র অথবা চারটি পি-৮০০ অনিক্স ক্ষেপণাস্ত্র বহনের সক্ষমতা রয়েছে। যা দিয়ে জল ও জাহাজ লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো সম্ভব।
এছাড়া রাশিয়ান নৌবাহিনীর বহরে আকুলা-শ্রেণির প্রায় পাঁচটি সাবমেরিন বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। এগুলো শার্ক (রাশিয়ান ভাষায় আকুলা মানে হাঙ্গর) নামেও পরিচিত। এই সাবমেরিন মার্কিন লস অ্যাঞ্জেলেস-শ্রেণির জবাব হিসেবে এই সাবমেরিন তৈরি। এতে ক্যালিবার, অনিক্স বা গ্রানিত ক্ষেপণাস্ত্র এবং টর্পেডো বহন করতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএন /সীমা
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: