গাজা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেবে ইসরায়েল : নেতানিয়াহু
প্রকাশিত:
২০ মে ২০২৫ ১১:৩৮
আপডেট:
২০ মে ২০২৫ ১৯:৫১

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেবে ইসরায়েল। এমনটাই জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
তার এই মন্তব্য এমন সময়ে এলো যখন ইসরায়েলি বাহিনী নতুন করে গাজায় জোরদার অভিযান শুরু করেছে এবং বহু মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
এদিকে দুই মাসের বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো গাজায় কিছু ত্রাণ প্রবেশ করেছে। তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা বলছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইও) জানিয়েছে, চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ অনাহারে ভুগছেন। জরুরি ভিত্তিতে খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানি না পৌঁছালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
ডব্লিউএইও প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, “সীমান্তে বিপুল পরিমাণ খাবার অপেক্ষমাণ, অথচ তা কয়েক মিনিট দূরেই অবস্থানরত ক্ষুধার্ত মানুষদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না। মানবিক সহায়তা ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখার ফলে গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে।”
এমন অবস্থায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডার নেতারা। তারা গাজায় ইসরায়েলের অভিযান, ত্রাণ অবরোধ এবং সাধারণ মানুষকে স্থানচ্যুত করার হুমকির কড়া বিরোধিতা করেছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “নেতানিয়াহুর সরকার এসব কাজ চালিয়ে যেতে থাকলে আমরা চুপ করে বসে থাকব না।”
এই পরিস্থিতিতে চাপের মুখে ইসরায়েল সোমবার গাজায় সীমিত ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয়। এদিন প্রথম ধাপে পাঁচটি ট্রাক প্রবেশ করে, যাতে শিশুদের খাবারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছিল। তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার জানান, মাত্র ৯টি ট্রাক ঢুকেছে—যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।
জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, “এখনো কোনো ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়নি। অন্ধকার ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে মাঠপর্যায়ে কাজ করা যাচ্ছে না।”
অবশ্য নেতানিয়াহু জানান, “বাস্তব ও কূটনৈতিক কারণেই” ত্রাণ প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “দুর্ভিক্ষের চিত্র বিশ্বে ইসরায়েলের অভিযানকে বৈধতা দিতে সমস্যার সৃষ্টি করবে।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচআর জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল এবং জাতিগত নির্মূলের মতো অপরাধের কাছাকাছি। হামাসবিরোধী অভিযানে সাধারণ মানুষকে স্থানচ্যুত করা, পাড়া-মহল্লা গুঁড়িয়ে দেওয়া ও ত্রাণ আটকে দেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক।
এদিকে গাজার মানবিক সংকট ঘিরে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। ফ্রান্স, জার্মানিসহ ২২টি ইউরোপীয় দেশ এক বিবৃতিতে বলেছে, “গাজার মানুষ অনাহারে ভুগছে—তাদের জরুরিভিত্তিতে সহায়তা দিতে হবে।”
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: