যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান
প্রকাশিত:
১৪ জুন ২০২৫ ২১:০১
আপডেট:
১৫ জুন ২০২৫ ১০:৫৫

করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ফের উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২৬ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পরীক্ষার সময়সূচি পেছানো নিয়ে নানা গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি নিশ্চিত করেছে, নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেই সঙ্গে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শনিবার (১৪ জুন) আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, দেশে করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে, এটা সত্য। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তবে এখন পর্যন্ত পরীক্ষার সময়সূচি পেছানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ২৬ জুন থেকে পরীক্ষা শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ বুঝতে পারি। কিন্তু পরীক্ষা পেছানোর সুযোগ নেই। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে আসন বিন্যাস করা হবে। পরীক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক ও স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক করা হবে।
পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে এবার নেওয়া হচ্ছে বাড়তি সতর্কতা। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে জীবাণুনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা থাকবে। পরীক্ষার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। পরীক্ষার হলে বসার আগে শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য থাকবে থার্মাল স্ক্যানার। একই সঙ্গে আসন বিন্যাসে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হবে যাতে একজন পরীক্ষার্থী অন্যজনের সংস্পর্শে না আসে। পরীক্ষার আগে ও পরে কেন্দ্র প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দিকেও বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে কেন্দ্রসচিবদের। এছাড়া, প্রয়োজন হলে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় অতিরিক্ত চিকিৎসাকর্মী ও ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম রাখার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, বর্তমান সংক্রমণের মাত্রা পরীক্ষা পেছানোর মতো নয়। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছি। সংক্রমণের পরিস্থিতি যদি হঠাৎ খারাপের দিকে মোড় নেয়, তখন সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। পরীক্ষার্থীদের যেন কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে না পড়তে হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অভিভাবকদের দাবি—কেন্দ্র সংখ্যা বাড়ানো হোক
একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষক জানান, দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। এতে করে পরীক্ষার্থীদের চাপ কিছুটা কমবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা সহজ হবে।
এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, আমার ছেলে পুরো সিলেবাস শেষ করেছে। পরীক্ষা পিছিয়ে দিলে ওদের মানসিক চাপ আরও বাড়বে। বরং দ্রুত পরীক্ষা শেষ করা গেলে ভালো হয়। তবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোর হতে হবে।
আবার অনেক শিক্ষকরাও বলছেন, কোনবাবেই অটোপাসের চিন্তাও করা যাবেনা বরং নিয়মতান্ত্রিক পরীক্ষা নিতে হবে৷ কারণ, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করে ‘অটোপাস’ দেওয়া হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা এখনও অনেকের মনে রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা কলেজের একজন অধ্যাপক বলেন, ‘অটোপাস সিদ্ধান্ত তখনকার প্রেক্ষাপটে যৌক্তিক ছিল। তবে এবারের বাস্তবতা ভিন্ন। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস ও প্রস্তুতির সুযোগ পেয়েছে। সুতরাং সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেওয়াই হবে যথার্থ সিদ্ধান্ত।’
এদিকে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড জানায়, পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের বিষয়ে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হন, সে জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বোর্ডের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করা হবে।
উল্লেখ্য, বোর্ডের প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ২৬ জুন শুরু হয়ে চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা ১১ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: