শনিবার, ১১ই মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১


তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল খোলায় অসন্তুষ্ট অভিভাবকরা


প্রকাশিত:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৩২

আপডেট:
১১ মে ২০২৪ ১৮:৪১

ছবি- সংগৃহীত

বেশ কয়েকদিন ধরে দেশের ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এমনই পরিস্থিতির মধ্যে স্কুল খুলেছে রোববার (২৮ এপ্রিল)। চলমান এই তাপপ্রবাহের মধ্যে আবারও হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। আর তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল খুলে দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। তারা বলছেন, শিশুদের কথা বিবেচনা করে সরকার আরও অন্তত এক সপ্তাহ পরে স্কুল খুলতে পারতো।

সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ফুলার রোডে অবস্থিত উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এ অসন্তুষ্টির কথা জানা যায়।

সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আরো ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন ধরে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।

রোববার সকাল ৮টা থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে। সে কারণে রোদ ওঠার আগেই অভিভাবকরা সন্তানকে পৌঁছে দিয়েছেন স্কুলের আঙিনায়। একইসঙ্গে গরমে সুস্থ থাকতে দিয়েছেন নানা উপদেশ। আবার তাপপ্রবাহে ক্লাসের বাইরে বের না হতে, মাঠে খেলাধুলা না করতে এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি না করার জন্যও সতর্ক করেছেন তারা।

উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাউনিতে সন্তানের ক্লাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায় অভিভাবক মমতাজ বেগম বলেন, এই গরমের মধ্যে স্কুল খোলাটা ঠিক হয়নি। কারণ পড়াশোনার চেয়ে জীবনটা আগে। বর্তমান সময়ে বাসায়ই জ্বর উঠে যাচ্ছে বাচ্চাদের। সরকার বলেছে রসালো ফল খেতে, অ্যাসেম্বলি না করতে— বাচ্চারা কি এটা মানবে। হয়ত সপ্তাহখানেক পরে বা ১০ দিন পরে তাপমাত্রা কমে যেত, যদিও আবহাওয়া অফিস কি সবসময় ঠিক কথা বলে। একটু অপেক্ষা করলে কি আর এমন হতো। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা সমর্থন করছি না। যেখানে একটা নিয়মের মধ্যে আছি, সেখানে তো জলে বসবাস করে কুমিরের সঙ্গে মারামারি চলে না।

কথা টেনে নাসরিন সুলতানা নামের আরেক অভিভাবক বলেন, এটার থেকে বড় কথা হচ্ছে শনিবার স্কুল খোলা রাখা হয়েছে। যে সময়টাতে স্কুল বন্ধ থাকলে ভালো হয় সেই সময়টাতেও সরকার স্কুল শনিবার খোলা রাখার কথা চিন্তা করেছে। আজ সকালে যখন বাচ্চাকে নিয়ে বাসা থেকে স্কুলে এলাম তখন সে একেবারে ঘামে ভিজে গেল। তো আপনি বলেন, সকাল সাড়ে সাতটার সময় বা সাতটার সময় যদি এরকম অবস্থা হয় তাহলে দিন গড়াতে গড়াতে আর কি অবস্থা হতে পারে। আগে থেকে আমরা এখানে ৬০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে আসতাম। গরমের কারণে এখন রিকশাচালকরা ১০০ টাকা ১২০ টাকা চেয়ে বসে থাকে। ৮০ টাকার নিচে তো আসাই যায় না। এই অতিরিক্ত টাকা দেবে কে?

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাচ্চারা তো করোনা সময় অনলাইনে ক্লাস করেছে। এখন না হয় ১০-১৫টা দিন অনলাইনে ক্লাস করত। এটাতে আহামরি কোনো ক্ষতি হয়ে যেত না।

শামসুন্নাহার নামের আরেকজন অভিভাবক বলেন, সরকারি অফিসার লোকজন তো এসির মধ্যে বসে অর্ডার করে, এজন্য তারা এত কিছু বোঝে না। তাদের উচিত স্কুলের সামনে এসে আমাদের মতো অপেক্ষা করা। তাদের বাচ্চারা যারা স্কুলে যায় তারা তো এসি গাড়ি দিয়ে যায়, তারা কি করে বুঝবে আমাদের কষ্টটা। আমাদের বাচ্চারা চারতলা-পাঁচতলা পর্যন্ত ভারী একটা ব্যাগ নিয়ে উঠছে। এদের সঙ্গে এক লিটার পানি। এত কিছু নিয়ে বাচ্চারা উঠতে পারে? তাদের তো লিফটে উঠতে দেয় না। শিশুদের পড়াশোনার জন্য ৫ দিনই যথেষ্ট, আবার একদিন কেন বাড়াতে হবে।

ডেমরা থেকে সন্তানকে স্কুলে নিয়ে এসেছেন মিথিলা সিদ্দিকী। তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালের যে বন্ধটা ছিল সেটা তো পরিপূর্ণ হয়নি। এরমধ্যে শনিবারের ছুটিটা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আমরা তো দূর থেকে সন্তানদের এখানে পড়াতে নিয়ে আসি। একই সরকার দুই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকের স্কুল শনিবারে বন্ধ থাকবে আর আমাদের মাধ্যমিক স্কুলগুলো শনিবার খুলে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখন যে কারিকুলামটা দিয়েছে এটা কিন্তু আমরা বেশিরভাগ গার্ডিয়ানরাই বুঝতে পারি না। আমাদেরকে বাইরের দেশের উদাহরণ দেওয়া হয় ভালো কথা। তাহলে ওরা আগে বাইরের দেশের মতো অবকাঠামো তৈরি করত। তারপর নতুন কারিকুলামটা নিয়ে আসতো। তাহলে পুরো দায়িত্বটা স্কুল নিতো। আমরা সকালে এসে বাচ্চাকে দিয়ে যেতাম এবং বিকেলে এসে নিয়ে যেতাম। আমাদেরকে এই মাঝামাঝি সময় এখানে বসে থাকতে হতো না।

এর আগে শনিবার (২৭ এপ্রিল) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানা হয়েছে, এক সপ্তাহ ছুটির পর রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও খুলছে। তবে ক্লাসের সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্লাস হবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৮ এপ্রিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চলমান থাকবে। এক পালায় (শিফটে) পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। আর দুই পালায় বিদ্যালয়গুলোয় প্রথম পালা সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় পালা সকাল পৌনে ১০টা থেকে থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলমান থাকবে। তবে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আর দাবদাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি (প্রাত্যহিক সমাবেশ) বন্ধ থাকবে। চলমান দাবদাহের কারণে কোমলমতি শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশুকল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম চালুর বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top