মসজিদ-মাদ্রাসায় কেউ হাত দিলে প্রতিরোধের জন্য আমি একাই যথেষ্ট: শামীম ওসমান
 প্রকাশিত: 
                                                ২১ মার্চ ২০২১ ২১:০৭
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ২২:৩৭
                                                
 
                                        মসজিদ-মাদ্রাসার বিরুদ্ধে কেউ অবস্থান নিলে সেটি প্রতিরোধের জন্য তিনি একাই যথেষ্ট বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ শামীম ওসমান।
তিনি বলেছেন, যারা সংখ্যালঘু তাদের রক্ষার দায়িত্ব এ দেশের মুসলমানদের। সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি বা দেবোত্তর সম্পত্তি যদি কেউ গিলে খেতে চায়, সেটিও রক্ষা করার দায়িত্ব মুসলমানদের। ঠিক তেমনি মসজিদ-মাদ্রাসায় যদি কেউ হাত দেয়, তবে আমি একাই এর প্রতিবাদ করব, প্রতিরোধ করব।
শনিবার (২০ মার্চ) রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নে ওলামা পরিষদ আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, আমি আছি, কারও ক্ষমতা থাকলে নারায়ণগঞ্জে মসজিদ ও মাদ্রাসায় হাত দিয়ে দেখাক।
তিনি বলেন, ওয়াজ মাহফিলে এসে ভেবেছিলাম কথাগুলো পরে বলব। কিন্তু আজকে বললাম; কারণ কালকে নাও থাকতে পারি। আমি চুপ করে থাকলে আমার মৃত্যুর পর আল্লাহ আমাকে ধরবেন যে ‘আমি তোকে বানাইসি তুই কী করসোস’।
শামীম ওসমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে একসঙ্গে ৫৬০টি মডেল মসজিদ করছেন। নারায়ণগঞ্জের মণ্ডলপাড়ায় একটি ওয়াকফ এস্টেটের ৮৩ শতাংশ জায়গা আছে। সেখানে সাড়ে ৫০০ বছরের পুরনো একটি মসজিদ আছে। ওয়াকফর প্রতিনিধিদের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসক অনুরোধ করার পর তারা ওই প্রাচীন মসজিদটি রেখে মডেল মসজিদের জন্য ৪৩ শতাংশ জায়গা দিলেন। কিন্তু এক নারী তখন সেখানে জোর করে ঢুকে গেলেন। তারা আমার কাছে আসল এবং কাগজও দেখালেন। কোর্টও তাদের পক্ষে গেল।
পরে তিনি বললেন, সামনে তিনি পার্কিং স্পেস বানাবেন। আসলে তার লক্ষ্য দোকান বানানো। কারণ দোকান হইলেই বিক্রি করা যায়।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের আলেমদের আওয়াজ নেই কেন? মোদির দেশে কী হইসে, তা নিয়া হাত পা কাইটা ফালাইতে চান। অথচ এখানে মসজিদ-মাদ্রাসা দখল হয়ে যাচ্ছে আর আলেমরা নিশ্চুপ।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে আমার বাসার সামনেই চাষাড়া বাগে জান্নাত মসজিদটি। আমি ছোটবেলায় সেখানে খেলেছি। সেখানে একটি কবরস্থান ছিল, যেখানে অনেক কামেল লোকের কবরও ছিল। সেখানে মসজিদ ও মাদ্রাসা হয়েছে। পর্চায় লেখা আছে— এখানে কবরস্থান ছিল এবং এই জায়গা শুধু ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় কাজে ব্যবহার হবে। তাই হয়েছে।
তবে নারায়ণগঞ্জে সেই নারীই বললেন, মসজিদ ও মাদ্রাসাটা ভাঙতে হবে। মসজিদটি ভেঙে পেছনে নেওয়া হবে আর মাদ্রাসাটা উঠিয়ে দেওয়া হবে। মাদ্রাসা উঠিয়ে সেখানে পার্ক করবেন, মসজিদের নিচে দোকান করবেন। ধর্মে আছে— সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা বাজার আর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জায়গা মসজিদ। আল্লাহ সম্মান প্রদানকারী এবং আল্লাহই সম্মান কেড়ে নিতে পারে। সেই আল্লাহর ঘরে যদি আঘাত আসে আর আমি চুপ করে বসে থাকি তা হলে মৃত্যুর পর আমাকে তার জবাব দিতে হবে।
শামীম ওসমান আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে একটা নিষিদ্ধ পল্লী ছিল। আল্লাহ আমাকে দিয়ে সে পাপ মোচন করিয়েছেন। তখন থেকেই বিভিন্ন ইমাম আলেমদের সঙ্গে আমার সম্পর্কে ভালো। তাই তাদের ওপর এত আঘাত।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের এত আলেম গেল কই? যারা সংখ্যালঘু তাদের রক্ষার দায়িত্ব মুসলমানদের। ওয়াকফর সম্পত্তি যেমন রেজিস্ট্রার হয় না, তেমনি দেবোত্তর সম্পত্তিও রেজিস্ট্রার হয় না। একাত্তরে কয়েক ধরনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কেউ দেশ বাঁচাতে যুদ্ধ করেছেন, কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, কেউ লুটেরা মুক্তিযোদ্ধা। আমি সব দেখেছি, মনে আছে। এত ভুয়া সম্পদ কোত্থেকে আসে।
শামীম ওসমান বলেন, আমার জীবনে চাওয়া-পাওয়ার আর কিছুই নেই। এ দেশে অনেক মন্ত্রী হয়েছেন, এমপি হয়েছেন; কিন্তু মানুষের ভালোবাসা আমার মতো অনেকেই পাননি। কারণ আমি দেশে ফেরার পর লাখ লাখ মানুষের সমাগম হলো। র্যাব-পুলিশ-বিজিবি সেনাবাহিনী সব এসেছিল গ্রেফতার করতে। এলাকার মানুষ মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আমাকে রক্ষা করল। আমরা তিন পুরুষ ধরে মানুষের এই ভালোবাসা পাচ্ছি।
অথচ নারায়ণগঞ্জে কেউ কেউ ভোটের আগে অনেকে গরিবের গালে গাল লাগিয়ে ছবি তোলেন। তখন গরিবের ঘামের গন্ধ লাগে না। আর ভোট শেষ হলেই রাস্তায় হকার আছে। পিটাও সবারে। আল্লাহ সাক্ষী, আমি সেদিন দেখলাম হকারদের মারছে। আমি রাস্তায় পাড়া দিলে ১০ হাজার লোক এক লাখ হতে সময় লাগে না। কিন্তু আমি বেইমানি করেছি, যাইনি। নিজের কাছে যখন অসহায় লেগেছে আমি শুধু দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেছি, আর আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। এসব করবেন না। কোরআনে নামাজ পড়ার কথা যতবার আছে তার চেয়ে বেশি আছে মানুষকে খাবার দেওয়ার কথা। তাদের বাসায় যখন বাচ্চারা ক্ষুধায় কান্না করবে আর তার মা যখন আল্লাহকে ডাকবে সেই ‘হাঁক’ খুব মারাত্মক। ধ্বংস হয়ে যাবে সব।
মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহ নিজাম, জাহাঙ্গীর, ওলামা পরিষদ নেতা মাওলানা ফৌরদাসুর রহমান প্রমুখ।
সম্পর্কিত বিষয়:
শামীম ওসমান


 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: