প্রতিবাদ করলেই ‘শোকজ’
যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষকদের বেতন বঞ্চনার অভিযোগ
প্রকাশিত:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১৭
আপডেট:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৫

যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের বেতন বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন বেতন বঞ্চিত শিক্ষকরা।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরেন তারা।
বেতন বঞ্চিত শিক্ষকরা জানান, প্রতিষ্ঠানের গত পাঁচ বছরের মোট আয় প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ ও টিউশন ফি বাবদ এসেছে প্রায় ১৯ কোটি টাকা এবং দোকান ভাড়া ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও প্রায় ২৫ কোটি টাকা। প্রতি মাসে শিক্ষকদের বেতন বাবদ ব্যয় হয় প্রায় ২৬ লাখ টাকা। সেই হিসেবে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা, তবুও ১৪ মাসের বেতন বকেয়া রাখা হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, বাকি ১৩ কোটিরও বেশি টাকা কোথায় গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সহকারী শিক্ষক সৈয়দা আরিফুন নাহার অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকদের বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কেটে রাখা হলেও তা জমা হয়নি। দোকান ভাড়া ও অগ্রীম টাকাও বিভিন্ন অজুহাতে তুলে নেওয়া হয়েছে। এমনকি খাতা দেখা, ডিউটি বা অন্যান্য ভাতার বিলও শিক্ষকদের দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ফাইল গায়েব করার অভিযোগে মরিয়ম বেগম বরখাস্ত হয়েছিলেন। অথচ সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক কারণে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাকে। এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আরিফুন নাহার বলেন, যদি রাজনৈতিক কারণে বহিষ্কার করা হয়ে থাকে তবে ফাইল গায়েবের অভিযোগে অভিযুক্ত পিয়ন মোসলেমও কি একই কারণে বরখাস্ত হয়েছিলেন?
আরও অভিযোগ করে বলা হয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা থেকে মরিয়ম বেগম ৯ মাসের বেতন পরিশোধ করেছেন। কিন্তু তখনো ছাত্রদের বেতন বাবদ আয় ছিল। তাহলে সেই অর্থের হিসাব কোথায়?
তিনি বলেন, ২০২০ সালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার পর মরিয়ম বেগম গ্রুপিং শুরু করেন এবং নিজের আজ্ঞাবহ শিক্ষকদের নিয়ে সমিতি গঠন করে ফ্ল্যাট ও জমি কেনেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার মাতুয়াইলে একাধিক ফ্ল্যাট ও চনপাড়ায় ২৭ কাঠা জমির মালিক। ২০২৩ সালে গভর্নিং বডির সভাপতি হন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জানে আলম। তিনি মরিয়ম বেগমকে খালি চেকে সই করে দেন, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অর্থ অপচয় হয় এবং শিক্ষকদের বেতন বাকি পড়তে শুরু করে।
অন্যান্য শিক্ষকদের অভিযোগ, বেতন বঞ্চনার কথা প্রকাশ করায় তাদের শোকজ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ধীরে ধীরে ৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে শোকজ করে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এমনকি ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগও ওঠে মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে।
শিক্ষকরা আরও জানান, ২০২১ সালের পর থেকে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান ভয়াবহভাবে নেমে গেছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে মাদক সেবন ও টিকটক বানানোর মতো কাজে জড়িয়ে পড়ছে। তারা শিক্ষা বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করলেও তদন্ত কার্যত থেমে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন– সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান হাওলাদার, গভর্নিং বডির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবু নাছের এবং গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য কাজী আতাউর রহমান লিটু।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: