শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর ২০২৪, ২২শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


নূহ (আ.) এর যে গুণের প্রশংসা করা হয়েছে কোরআনে


প্রকাশিত:
২০ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৮

আপডেট:
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:২১

প্রতীকী ছবি

হজরত নূহ আ.-কে আদমে সানী বা দ্বিতীয় মানব বলা হয়। তার জাতির খোদাদ্রোহীতা এবং সত্য পথ থেকে বিচ্যুতির কারণে আল্লাহ তায়ালা শাস্তি হিসেবে পৃথিবীজুড়ে বন্যা দিয়েছিলেন। এই বন্যায় অল্প কিছু মানুষ ছাড়া সবাই মারা যান। পরবর্তীতে তাদের মাধ্যমেই মানবজাতির বিস্তার ঘটে। এজন্য নূহ আ.-কে আদমে সানী বলা হয়।

নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের খোদাদ্রোহীতার কথা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। তিনি প্রায় হাজার বছরের মতো জীবন পেয়েছিলেন। দীর্ঘ জীবনে তিনি মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদরে দিকে আহ্বান করেছেন। কিন্তু তার সম্প্রদায়ের লোকজন নবীর কথায় সাড়া দেয়নি। উল্টো তার ওপর বিভিন্ন পন্থায় নির্যাতন করেছে, কখনো কখনো তাকে পাথর দিয়ে আঘাত করেছে। তাদের আঘাতে নূহ আলাইহিস সালাম অনেক সময় রক্তাক্ত এবং বেহুশ হয়ে পড়ে থাকতেন। জ্ঞান ফিরলে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলতেন, হে আল্লাহ আমার জাতিকে ক্ষমা করুন, তারা অজ্ঞ, মূর্খ, জানে না, বুঝে না।

তাদের সব নির্যাতন সয়ে তিনি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মকে আসমানী ধর্মের দিকে আহ্বান করে গেছেন শুধু এই আশায় যে হয়তো তাদের কোনো এক প্রজন্ম তার কথায় আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে।

কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী প্রাণপণ চেষ্টা করেও নূর আলাইহিস সালামের সম্প্রদায় আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনেনি।

এভাবে নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔদ্ধত্য বেড়ে যাওয়ায় আল্লাহ তায়ালা ঈমানদার ছাড়া বাকিদের সমূলে ধ্বংস করে দেন। তার আগে তিনি নূহ আলাইহিস সালামকে একটি নৌকা তৈরির নির্দেশ দেন। নৌকার নির্মাণ কাজ শেষ হলে একদিন প্লাবন হলো। আসমান থেকে মুষলধারে বৃষ্টি নামল, ভূমিতল থেকেও উতলে উঠল পানি।

নূহ আলাইহিস সালাম ঈমানদার মানুষ এবং জোড়া জোড়া প্রাণী নিয়ে নৌকায় চড়লেন। এই প্লাবনে নৌকার আরোহী ছাড়া পৃথিবীর সব প্রাণী মারা যায়। সবকিছু ধ্বংস হওয়ার পর আল্লাহর হুকুমে আসমানের বৃষ্টি থামে, জমিন পানি শোষণ করে নেয়। ঈমানদারদের দ্বারা পৃথিবী আবার নতুন করে আবাদ হয়। ফুল-পাখিতে ভরে ওঠে দুনিয়া।

ঈমানদার মানুষের পৃথিবী গড়তে নূহ আ. তাঁর জীবনের সিংহভাগ কষ্ট করে গেছেন। দুঃখ-কষ্টে আল্লাহ তায়ালার ওপর ধৈর্যধারণ করেছেন এবং আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তার এই গুণটি পছন্দ করেছেন এবং পবিত্র কোরআনে এই গুণের প্রশংসা করেছেন। বর্ণিত হয়েছে—

ذُرِّیَّۃَ مَنۡ حَمَلۡنَا مَعَ نُوۡحٍ ؕ اِنَّهٗ كَانَ عَبۡدًا شَكُوۡرًا

তোমরাই তো তাদের বংশধর, যাদেরকে আমি নূহের সাথে (কিশতীতে) আরোহণ করিয়েছিলাম, নিশ্চয় সে ছিল পরম কৃতজ্ঞ বান্দা। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ৩)

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নূহ আ.-এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের গুণের প্রশংসা করেছেন। এই আয়াত ছাড়াও বিভিন্ন হাদিসেও নূহ আলাইহিস সালামকে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

কিয়ামতের দিন শাফায়াতের বৃহৎ হাদিসে এসেছে যে, লোকজন হাশরের মাঠে নূহ আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে নূহ! আপনি জমিনের অধিবাসীদের কাছে প্রথম রাসূল। আপনাকে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে ঘোষণা করেছে। (বুখারি, হাদিস : ৪৭১২)

নূহ আলাইহিস সালামকে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে বলার পিছনে আরও একটি কারণ কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, নূহ আলাইহিস সালাম যখনই কোন কাপড় পরতেন বা কোন খাবার খেতেন তখনই আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। সে জন্য তাকে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৬৩০)


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top