ঐক্য গড়ার যে উপায় হাতে-কলমে শিখিয়েছে ইসলাম
 প্রকাশিত: 
                                                ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৪১
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:৪৪
                                                
 
                                        ইসলাম বিভেদ ও অনৈক্যের কোনো স্থান দেয় না। এর মূল ভিত্তি হলো তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদে অটল বিশ্বাস। তাওহিদ ও রিসালাতের প্রতি বিশ্বাসই মুমিনদের এক সুদৃঢ় সুতোয়ে গেঁথে রাখে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)
একতাবদ্ধ থাকা, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষা করা তাই ঈমানি দাবি। এমন সকল কাজ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য, যা উম্মাহর মধ্যে বিভেদের দানা বাঁধে। বরং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে মোকাবিলার জন্য তাওহিদে বিশ্বাসী সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। তিনি স্পষ্ট সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন- ‘তোমরা সেসব লোকের মতো হয়ো না, যাদের কাছে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৫)
ঐক্যের সুফল ও অনৈক্যের পরিণতি
ঐক্যের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো- এটি মুমিনদের আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত শক্তি প্রদান করে। অন্যদিকে বিবাদ ও কলহ মুমিন সমাজকে দুর্বল ও নিষ্প্রভ করে তোলে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো। পরস্পর বিবাদ করো না। তাহলে দুর্বল হয়ে যাবে এবং তোমাদের প্রভাব বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনফাল: ৪৬)
বিভেদ ভুলে ঐক্য গড়ার উপায়
১. পরস্পর সমঝোতা: মুমিনদের মধ্যে কোনো বিবাদ দেখা দিলে তা মীমাংসার মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ ফিরিয়ে আনা জরুরি। পবিত্র কোরআনে এর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, অতএব তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে সমঝোতা করো এবং আল্লাহকে ভয় করো যেন তোমাদের অনুগ্রহ করা হয়।’ (সুরা হুজরাত: ৯-১০)
২. সহনশীলতা ও উদারতা: ঐক্য ধরে রাখতে ত্যাগ, সহনশীলতা ও উদার মনোভাব অপরিহার্য। রাসুলুল্লাহ (স.) মুমিনদেরকে ঐক্যবিরোধী সকল আচরণ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন- ‘তোমরা মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, ধারণা হচ্ছে নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার। তোমরা আড়ি পেতো না, গোপন দোষ অন্বেষণ করো না, স্বার্থের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ো না, হিংসা করো না, বিদ্বেষ পোষণ করো না, সম্পর্কচ্ছেদ করো না, পরস্পর কথাবার্তা বন্ধ করো না, একে অপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না...।’ (বুখারি: ৫১৪৩, মুসলিম: ২৫৬৩)
৩. মতপার্থক্যকে ফিরকায় পরিণত না করা: ইসলামে বিষয়ভিত্তিক মতপার্থক্য (ইখতিলাফ) স্বীকৃত, কিন্তু আকিদাগত বিভক্তি (ফিরকা) কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সাহাবা ও তাবেইনদের যুগে মতপার্থক্য থাকলেও তারা কোরআন-সুন্নাহকে কেন্দ্র করে একই উম্মাহর অংশ ছিলেন। আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে বলেন- ‘এই যে তোমাদের জাতি, এ তো একই জাতি আর আমি তোমাদের পালনকর্তা, অতএব তোমরা (ঐক্যবদ্ধভাবে) আমারই ইবাদত করো।’ (সুরা তওবা: ৯২)
বর্তমানে অনেকেই নিজ দল বা মাজহাব নিয়ে গর্ববোধ করে এবং অন্যদেরকে ভ্রান্ত মনে করে, যা কোরআন বর্ণিত সেই সম্প্রদায়ের মতো, যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত। (সুরা রুম ৩০: ৩২)
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর অনুপম দৃষ্টান্ত
নবীজি (স.) কোনো বিবাদ মিমাংসার সময় চূড়ান্ত ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতেন। তিনি পারস্পরিক অধিকার লঙ্ঘন, মিথ্যা দাবি ও পক্ষপাতিত্বের কঠোর নিন্দা করতেন এবং ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতা জাগ্রত করতেন। তিনি পারস্পরিক সুসম্পর্ককে সর্বোত্তম ইবাদতগুলোর একটির সাথে তুলনা করেছেন- ‘আমি কি তোমাদের নামাজ, রোজা ও সদকার চেয়ে উত্তম কাজ সম্পর্কে অবহিত করব না?’ সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’ তিনি বললেন, ‘পরস্পর সুসম্পর্ক স্থাপন। কারণ, পরস্পর সুসম্পর্ক নষ্ট হওয়া মানে দ্বীন বিনাশ হওয়া।’ (তিরমিজি: ২৫০৯)
মূলত অনৈক্য ও বিভেদ মুমিনের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবনে ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনে। বিজয় ও সাফল্যের চাবিকাঠি হলো তাওহিদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং সেইসব পথ পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন, যা পূর্ববর্তী উম্মতগুলোর পতন ও শাস্তির কারণ হয়েছিল। আমাদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব লোককে ভালোবাসেন, যারা তাঁর পথে এমনভাবে সংগঠিত হয়ে যুদ্ধ করে, যেন তারা এক প্রাচীরের ইট।’ (সুরা সফ: ৪)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার এবং বিভেদ-বিসংবাদ থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত বিষয়:



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: