45175

11/20/2025 প্রস্তাবিত পাবলিক ইস্যু রুলসে আগ্রহ কমবে কোম্পানি তালিকাভুক্তির

প্রস্তাবিত পাবলিক ইস্যু রুলসে আগ্রহ কমবে কোম্পানি তালিকাভুক্তির

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

১৯ নভেম্বর ২০২৫ ২০:০৮

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রস্তাবিত পাবলিক ইস্যু রুলসে ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্র আগ্রহ হারাবে বলে মনে করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি)।

সংগঠনটির পরিচালক ও নির্বাহী সদস্য মো. কায়সার হামিদ বলেন, ‘প্রস্তাবিত রুলসে এমন কতগুলো বিষয় রাখা হয়েছে, তাতে ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলো (শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাবকারী) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহ হারবে।’

বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক অফার অব ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ) রুলস, ২০২৫’ শীর্ষক বৈঠকে তিনি বিএপিএলসির প্রতিনিধি হিসেবে এমন মন্তব্য করেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে।

বিএপিএলসি হলো দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একমাত্র সংগঠন, যারা তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো হয়ে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সব বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।

মো. কায়সার হামিদ বলেন, ‘আমাদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাড়ে ৩০০ কোম্পানির আরো ৪০০-৫০০টি সহযোগী কোম্পানি রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে ১০০টি চাইলে যেকোন সময়ে তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে। তবে, আমরা এগুলো তালিকাভুক্ত করতে পারছি না শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বচ্ছতার অভাবের কারণে।’

তিনি বলেন, বিএসইসির কোম্পানিগুলোকে তত্ত্বাবধানের (সুপারভিশন) ক্ষমতা কম, সেজন্য পরিবারের অভিভাবকের মতো ‘বাচ্চা এটা করতে পরবে না-ওটা করতে পারবে না বলে’ সবকিছু বিধান করে দিচ্ছে। এতে অভিভাবক হিসেবে তত্ত্বাবধানের দায়ভার থেকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আইন দিয়ে কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন জায়গায় সীমাবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে।

বিএপিএলসির এই নির্বাহী সদস্য আরো বলেন, ‘প্রস্তাবিত পাবলিক ইস্যু রুলসে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) যারা শেয়ার কিনবেন, কেবল তারাই লাভবান হবেন। এখানে ইস্যুয়ার কোম্পানির কথা চিন্তা করা হয়নি। শেয়ারহোল্ডররা দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানির সঙ্গে থেকে ব্যবসায় অংশীদারিত্ব করবে, এমন রুলস হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত রুলসে ইস্যুয়ার কোম্পানি আইপিওর অর্থে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। অথচ, এটি তো ইস্যুয়ার কোম্পানির সিদ্ধান্ত, সে কোথায় তার অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা করবে। কোম্পানি যদি তার ঋণের বোঝা কমিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের নিয়ে ব্যাবসা করতে পারে, তাতে তো দীর্ঘমেয়াদে ভালো কিছু হতে পারে। তাছাড়া, ইস্যুয়ার কোম্পানি তো তার প্রয়োজনেই মার্কেটে আসবে, সে কোথায় কত টাকা ব্যয় করবে, এটা তো পুরোপুরি তার বিষয়। এখানে এই বিষয়গুলো বেধে দেওয়া নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পথে বাধা হবে।’

এছাড়া, তালিকাভুক্ত হতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পিই রেশিওমার্কেট পিই রেশিও বিবেচনায় নেওয়া, দুই বছরের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তান আনতে না দেওয়া এবং দুই বছরের মধ্যে মূলধন না বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এগুলো ইস্যুয়ার কোম্পানিকে বাজারে আসতে নিরুৎসাহিত করবে বলে মনে করেন বিএপিএলসির এই পরিচালক।

ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে প্রস্তাবিত পাবলিক ইস্যু রুলসের ওপর বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি), বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) প্রতিনিধি, বিভিন্ন গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা নিজ নিজ মতামত পেশ করেন।

এ সময় ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের পর আমরাই প্রথম পুঁজিবাজারের সংস্কারের কথা বলেছিলাম। সংস্কার মানেই অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। আমরা আশা করবো পাবলিক ইস্যু রুলস চূড়ান্ত করার আগে নিশ্চয়ই কমিশন আমাদের সঙ্গে বসবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বাজার রিফর্মের কথা বলেছিলাম। ডিএসইর ক্ষমতায়ন বাড়ানোর জন্য বলেছিলাম। দীর্ঘ ১ বছরের বেশি সময় হলেও আমরা সেটি দেখতে পাইনি। এখন বাজারবান্ধব (মার্কেট ফ্রেন্ডলি) আইপিও রুলস করার কথা বলছি, এটি যদি না হয়, তাহলে পুঁজিবাজার অনেক বছর পিছিয়ে যাবে।’

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]