জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেছেন, দেশে এখন এমন সক্ষমতা গড়ে উঠছে যে অধিকাংশ ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যদিও আমাদের জনবল সংকট, যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তবুও চিকিৎসা ও সেবার মান উন্নয়নে কাজ চলছে।
রোববার (২৭ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর মহাখালীতে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ‘স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, বাংলাদেশ ক্যান্সার প্রতিরোধ, নির্ণয় ও চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর ক্যান্সার রিসার্চের তথ্যমতে, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে প্রায় দুই কোটি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এর মধ্যে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। গ্লোবাল ক্যান্সার অ্যাটলাস অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।
তিনি বলেন, আমরা এই পরিসংখ্যান পুরোপুরি বিশ্বাস করি না, কারণ এখনো দেশে অপারেশন-ভিত্তিক কোনো জাতীয় ক্যান্সার রেজিস্ট্রি নেই।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি, আর নারীদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সার শীর্ষে রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে আরও কয়েকটি ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো চালু হলে মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। বর্তমানে দূর-দূরান্ত, এমনকি কনস্পারা অঞ্চল থেকেও রোগীরা ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসে, এবং চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই তাদের কষ্ট শুরু হয়।
চিকিৎসার মান, জনবল সংকট ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি
অধ্যাপক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, শুধু ভবন বা অবকাঠামো করলেই হবে না; যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল ছাড়া উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র ৩০০ জনবল দিয়ে প্রায় ৫০০ রোগীর চিকিৎসা চলছে। ২০২১ সাল থেকে আমরা জনবল বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছি। সম্প্রতি সেই ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, অনুমোদন পেলে সার্ভিস আরও উন্নত হবে।
তবে তিনি আশাবাদী কণ্ঠে যোগ করেন, আল্লাহর রহমতে আধুনিক বিশ্বমানের চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই আছে। যদিও কিছু যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে, তবুও আমরা ইতোমধ্যে দুটি নতুন মেশিন চালু করেছি। আরও দুটি লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যদি আটটি রেডিওথেরাপি ইউনিট চালু করা যায়, তাহলে ক্যান্সার রোগীদের কষ্ট অনেকটা কমে যাবে।
অধ্যাপক কবির বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ একটি লো রিসোর্স দেশ, তাই প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এজন্যই সারা বিশ্বে স্ক্রিনিং ও সচেতনতা মাস পালন করা হয়। ক্যান্সারকে যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা যায়, তাহলে চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। কিন্তু অ্যাডভান্স স্টেজে এলেই চিকিৎসা করেও বাঁচানো যায় না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখন সব পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। আগে সিটি স্ক্যান ছিল না, গতকাল থেকে তা চালু হয়েছে। এই বছরই ইনশাআল্লাহ একটি এমআরআই মেশিনও চালু হবে। ফলে পরীক্ষার জন্য রোগীদের আর বাইরে যেতে হবে না।
অধ্যাপক কবির জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ব্রেস্ট ক্যান্সারসহ অধিকাংশ ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশে যথেষ্ট সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এখন দরকার মানুষের কনফিডেন্স- বিশ্বাস রাখতে হবে, দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসা করা সম্ভব।
তিনি জানান, ক্যান্সারের সব চিকিৎসা ও সার্জারি এখন দেশে হয়। তবে বর্তমানে সিআরএস হাইপ্যাক ও রোবটিক সার্জারি চালু হয়নি। এই বছরের মধ্যেই সিআরএস হাইপ্যাক চালু করার পরিকল্পনা আছে, কারণ মেশিন কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
কেমোথেরাপি সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে কেমোথেরাপি সম্পূর্ণ ফ্রি দেওয়া হয়। কখনও ওষুধ শেষ হয়ে গেলে রোগীদের কিছুটা কিনতে হয়, তবে সার্ভিসটি বিনামূল্যেই দেওয়া হয়। সরকার বিপুল পরিমাণ সম্পদ চিকিৎসা সরঞ্জাম হিসেবে দিয়েছে, আরও দিচ্ছে। এতে অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।