41504

08/26/2025 সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার পক্ষে ৮৯% মানুষ

সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার পক্ষে ৮৯% মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ আগস্ট ২০২৫ ১৫:১২

দেশের জনগণের বিশাল অংশ একমত যে একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা উচিত নয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৮৯ শতাংশ এমন মনে করেন। সুজনের নাগরিক সংলাপ ও বিস্তৃত জনমত জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই জরিপটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপের এটিএম শামসুল হক মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক— সুজন কর্তৃক আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপের মূল প্রবন্ধে এসব উঠে আসে। সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির সদস্য মো. একরাম হোসেন।

প্রবন্ধে উঠে আসে, জনগণ ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ এবং দীর্ঘমেয়াদী নেতৃত্বের ওপর তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছে। জনগণ চায় যে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ব্যক্তি অতিরিক্ত ক্ষমতা অর্জন না করুক, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সুজনের জনমত জরিপে দেশের ৬৪টি জেলা থেকে মোট এক হাজার ৩৭৩ জন নাগরিক অংশ নিয়েছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নারী ছিলেন ৩৩৫ জন, পুরুষ এক হাজার ৩৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের পাঁচজন।

জরিপে দেখা গেছে, তরুণ এবং মধ্যবয়সি উভয় শ্রেণির জনগণ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিতকরণের পক্ষে। শহরাঞ্চলের জনগণ এই প্রস্তাবের গুরুত্ব বেশি দেখেছেন, তবে গ্রামীণ এলাকা থেকেও ব্যাপক সমর্থন পাওয়া গেছে।

জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জনগণ দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা মনে করেন, একাধিক মেয়াদে একই নেতা থাকলে নীতি প্রণয়ন ও প্রশাসন পক্ষপাতিত্বপূর্ণ হতে পারে, যা রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জরিপে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ শুধু ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা নয়, এটি নতুন নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনী নীতি প্রবর্তনের সুযোগও সৃষ্টি করে। এটি জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও সহায়ক।

এছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী পদে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার, নীতি প্রণয়নে পক্ষপাত এবং দুর্নীতির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এই কারণেই তারা দৃঢ়ভাবে দুই মেয়াদ সীমিত করার পক্ষে।

সুজন ইতোমধ্যেই এই ফলাফলকে প্রস্তাবিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এটি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থার মতে, রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে, তবে তা দেশে গণতন্ত্রের শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

জনমতের বিশ্লেষণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে— যারা এই সংস্কারের পক্ষে নেই, তারা সাধারণভাবে নিরপেক্ষ। তবে ৮৯ শতাংশ সমর্থক নির্দেশ করছে যে, জনগণ গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা এবং ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।

সংলাপ ও জনমত জরিপের মাধ্যমে সুজন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে স্পষ্ট বার্তা পাঠাচ্ছে যে, জনগণ একক ক্ষমতার প্রতি সীমাবদ্ধতা আরোপের পক্ষে। এটি দেশীয় রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখে, যা সরকার ও জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য অনুপ্রাণিত করবে।

উল্লেখ্য, মতামত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ বছরের গত ২৯ মে থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত সুজন প্রণীত প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে ৬৪টি জেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে সারা দেশে ১৫টি নাগরিক সংলাপের আয়োজন করা হয়। এর পাশাপাশি একই সময়ে সংস্কার বিষয়ে ৪০টি প্রশ্ন নিয়ে একটি জনমত জরিপ পরিচালনা করে সুজন। এতে দেশের সব জেলার মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]