অজু মুমিনের আধ্যাত্মিক শক্তির উৎস ও ইবাদতের চাবিকাঠি। এটি হাত-পায়ের ময়লা দূর করার সঙ্গেসঙ্গে হৃদয়কেও পরিশুদ্ধ করে। নবীজি (স.) অজুর পর কিছু বিশেষ দোয়া পড়ার কথা বলেছেন। দোয়াগুলো আল্লাহর নৈকট্য, তাওবা গ্রহণ এবং অন্তরের শান্তি অর্জনের শক্তিশালী মাধ্যম। প্রতিদিন দোয়াগুলো পড়লে ঈমানের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং গুনাহ মাফ হয়।
১. তাওহিদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য
এই দোয়া নবীজির (স.) মৌলিক শিক্ষার প্রতিফলন। এটি পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর প্রেরিত রাসুল (স.)-এর প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে আবারও দৃঢ় করি।
আরবি: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রাসূলুহু
বাংলা অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স.) তাঁর বান্দা ও রাসুল। (সহিহ মুসলিম: ১/২০৯)
ফজিলত: এই দোয়া পড়লে জান্নাতের আটটি দরজা খোলা হবে বলে হাদিসে উল্লেখ আছে।
২. তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের কাতারে অন্তর্ভুক্তির প্রার্থনা
অজু বাহ্যিক পবিত্রতার প্রতীক। এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে অন্তরের পবিত্রতা এবং নিয়মিত তাওবা করার তাওফিক প্রার্থনা করা হয়।
আরবি: اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ، وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ-‘আলনী মিনাত-তাওওয়াবীনা, ওয়াজ-‘আলনী মিনাল মুতাতাহহিরীন
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত কর। (জামে তিরমিজি: ১/৭৮)
ফজিলত: এটি অন্তরের ও বাহ্যিক উভয় পবিত্রতার জন্য এক শক্তিশালী দোয়া।
৩. আল্লাহর প্রশংসা ও ক্ষমা প্রার্থনার পরিপূর্ণ জিকির
এই দোয়া সংক্ষিপ্ত হলেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এতে আল্লাহর প্রশংসা, একত্বের ঘোষণা, ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা—সবকিছুই সংযুক্ত।
আরবি: سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং তোমার প্রশংসা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার কাছে তওবা করছি। (নাসায়ি, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, পৃ. ১৭৩)
ফজিলত: হাদিসে উল্লেখ আছে, এই দোয়া পড়লে অজুর স্থান নূরানির মাধ্যমে পূর্ণ হয়।
কীভাবে পড়বেন?
অজুর সকল স্তর সম্পন্ন করার পর দোয়াগুলো পড়ুন। দোয়াগুলো উচ্চারণসহ স্বল্প কণ্ঠে পড়ুন।
ক্রম অনুযায়ী পড়া উত্তম; তবে যদি কেউ একটি ভুলে যায়, বাকিগুলোও সওয়াব দেবে ইনশাআল্লাহ।
নিয়মিত এই দোয়াগুলো পড়লে অন্তরের পবিত্রতা, আল্লাহর নৈকট্য এবং গুনাহ মাফের এক শক্তিশালী মাধ্যম তৈরি হয়। এই ছোট্ট আমল আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে বরকতপূর্ণ ও শান্তিময় করে তুলতে পারে।