সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সোমবার (১৯ আগস্ট) মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন। এর আগে রোববার দিনভর সিনেট ভবনে ভিড় করেন ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। কেউ কেউ ইতোমধ্যে প্যানেল ঘোষণা করলেও, অনেকেই এখনো তা চূড়ান্ত করেননি।
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শেষ দিনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে আগেই অভিযোগ করা হয়েছিল, নির্বাচনে সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সোমবার দুপুরের পর থেকে সিনেট ভবনে উপস্থিত হয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন দলের একাধিক নেতা। যদিও ছাত্রদল এখনো পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেনি। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান বলেন, আমরা এখন শুধু মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছি। কারা কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, সেই সিদ্ধান্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেবেন।
এদিন ফরম নিয়েছেন বিএম কাউসার, আবিদুল ইসলাম খান, তানভীর বারী হামিম, আরিফুল ইসলাম, মুমিনুল হক জিসানসহ আরও অনেকে। বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তানভীর বারী হামিম বলেন, তারেক রহমান পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করবেন। এ ছাড়া সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ওবায়দুল্লাহ রেদওয়ান এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে জারিফ রহমান মনোনয়ন নিয়েছেন।
এদিকে ছাত্রশিবির ইতোমধ্যে ২৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে রয়েছেন সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মহিউদ্দিন খান। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার প্যানেলের নাম ও ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।
ঘোষিত প্যানেলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে ফাতিমা তাসনীম জুমা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নুরুল ইসলাম সাব্বির, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ইকবাল হায়দার, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে উম্মে সালমা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে খান জসীম, ক্রীড়া সম্পাদক পদে আরমান হোসেন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে আসিফ আব্দুল্লাহ, সমাজসেবা সম্পাদক পদে শরিফুল ইসলাম মুয়াজ। এছাড়া গবেষণা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয় এবং ১৩টি সদস্য পদে প্রার্থী দিয়েছে সংগঠনটি।
আংশিক স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এবি জুবায়ের এবং জুলাই ঐক্যের সংগঠক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ। তবে তাদের প্যানেলে ভিপি ও জিএস পদে প্রার্থী নেই। এই প্যানেলে আছেন আব্দুর রহমান আল ফাহাদ, আশিক খানসহ আরও কয়েকজন পরিচিত মুখ। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মুসাদ্দেক, আর সমাজসেবা সম্পাদক পদে লড়ছেন এবি জুবায়ের। মুসাদ্দেক বলেন, প্রায় ৭ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
ছাত্র অধিকার পরিষদ তাদের প্যানেলের নাম দিয়েছে ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’। তাদের স্লোগান— ‘ভোট ফর চেঞ্জ’। প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, জিএস পদে সাবিনা ইয়াসমিন এবং এজিএস পদে রাকিবুল ইসলাম। সম্পাদক পদে মনোনয়ন নিয়েছেন— বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে শাকিল খান, সমাজসেবা সম্পাদক পদে আরিফুর রহমান মজুমদার, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মুক্তার হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে আশিক হৃদয় আহমেদ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে রাকিব হোসেন গাজী, মানবাধিকার সম্পাদক পদে ইশতিয়াক আহমেদ এবং গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সিয়াম ফেরদৌস ইমন। সদস্য পদে মনোনয়ন নিয়েছেন রাহাত, রেজোয়ান, মুহিউদ্দীন আহমেদ, কৌফিক আবির, নোমান, রুদ্র, মোফাচ্ছেল হক ও মাহতাব ইসলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা নেতৃত্ব দিচ্ছেন আরেকটি স্বতন্ত্র প্যানেলকে। আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) ঘোষণা করা হবে তাদের চূড়ান্ত প্যানেল। ভিপি পদে লড়বেন উমামা ফাতেমা, জিএস পদে প্রার্থী হয়েছেন সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং এজিএস পদে আছেন সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহী। উমামা ফাতেমা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব প্যানেল ঘোষণা করবো।
বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর গঠিত প্যানেলের ভিপি পদে রয়েছেন শামসুন্নাহার হলের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। জিএস পদে আছেন মেঘমল্লার বসু, এজিএস পদে জাবির আহমেদ জুবেল এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে মোজাম্মেল হক। বাম জোটের প্যানেলে রয়েছেন অন্তত ১১ জন নারী, ২ জন আদিবাসী এবং ১ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, যারা পূর্ববর্তী বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। মঙ্গলবার প্যানেলের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ আহসান জানিয়েছেন, তারাও মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করবে। তবে এরই মধ্যে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসির, সদস্য সচিব জাহিদ আহসান, আহ্বায়ক বাকের মজুমদার, ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব আল আমিন সরকার, মুখপাত্র রাফিয়া রেহনুমা হৃদি ও আশরেফা খাতুনসহ আরও অনেকে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ইতোমধ্যে গত ৭ আগস্ট সম্ভাব্য প্যানেল ঘোষণা করেছে। ভিপি পদে লড়বেন ইয়াসিন আরাফাত, জিএস পদে খায়রুল আহসান মারজান এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সাইফ মুহাম্মদ আলাউদ্দিন।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে হল সংসদের জন্যও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ হয়েছে বিপুল পরিমাণে। প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন খান জানিয়েছেন, হল সংসদের জন্য মোট ১,২২৬টি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে।
বিভিন্ন হলে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সংখ্যা হলো—সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৭১ জন, শহীদুল্লাহ হলে ৯৭ জন, জগন্নাথ হলে ৬৬ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৭৮ জন, জহুরুল হক হলে ৯৩ জন, সূর্যসেন হলে ৯০ জন, মুহসিন হলে ৭৪ জন, শামসুন্নাহার হলে ৩৭ জন, জসীমউদ্দীন হলে ৭৪ জন, জিয়াউর রহমান হলে ৮৭ জন, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৬৯ জন, সুফিয়া কামাল হলে ৪০ জন, রোকেয়া হলে ৪৬ জন, কুয়েত মৈত্রী হলে ২৯ জন, ফজিলাতুননেছা মুজিব হলে ৩০ জন, অমর একুশে হলে ৮৪ জন, বিজয় একাত্তর হলে ৮৮ জন এবং এফ রহমান হলে ৭৩ জন।
উল্লেখ্য, প্রার্থিতা ও প্যানেল নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে নতুন করে জমে উঠছে ডাকসু নির্বাচন। দীর্ঘদিন পর এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মাঝে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
এসএন/রুপা