সকাল গড়াতেই যখন হাজারো মানুষ কর্মস্থলের পথে বেরোয়, হঠাৎ ঝেঁপে নামা বৃষ্টি তাদের দৈনন্দিন ছন্দকে এলোমেলো করে দেয়। মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কল্যাণপুর, ফার্মগেটসহ ঢাকার ব্যস্ততম সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা ও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
গন্তব্যে ছুটে চলা যাত্রীরা ভেজা পোশাকে ঘণ্টাখানেক বা তারও বেশি সময় আটকে থাকেন। এই প্রবল বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন অফিসগামী মানুষরা। ভোর থেকে শুরু হওয়া একটানা বৃষ্টিতে মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া ও ধানমন্ডি এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে যায়।
রোববার (১৭ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্ষণের ফলে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে কাদা ও পানি দিয়ে ভরে গেছে। মিরপুর, কল্যাণপুর, ফার্মগেট ও বাংলামোটরের বেশ কিছু এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা ছাতা হাতে ভিজে দাঁড়িয়ে থাকেন, অনেকেই নিরুপায় হয়ে হেঁটে বা রিকশায় গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও ধীরগতির কারণে যানজট ব্যাপক হারে বেড়েছে।
অফিসগামী পথচারীরা অভিযোগ করেন, বৃষ্টি হলেই ঢাকার রাস্তায় একই দৃশ্য দেখা যায়। ভিজে পৌঁছানো যেমন কষ্টকর, তেমনি যানজটে আটকে ঘণ্টাখানেক সময় নষ্ট হয়। তারা বলেন, বর্ষায় গাড়ি পাওয়া কঠিন, আর পাওয়া গেলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে দ্বিগুণ সময় লাগে। নগরীর অপরিকল্পিত অবকাঠামোর কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় প্রতিদিনের মতোই ভোগান্তি পোহাতে হয়, আর বৃষ্টি হলে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তারা জানান, পরিকল্পিত নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছাড়া এই দুর্দশা থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।
শেওড়াপাড়ার বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা সরকারি চাকরিজীবী সেলিনা আক্তার বলেন, বৃষ্টি মানেই এখানে দুর্ভোগ। বাস থেকে নামতে গিয়ে পা ডুবল পানিতে, তারপরও অফিসে যেতে হবে।
আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী জাহিদুল ইসলাম মিরপুর-১০ গোলচত্বরে বৃষ্টির কারণে আটকে পড়েছেন। তিনি বলেন, সাধারণত মিরপুর থেকে অফিসে পৌঁছাতে আধা ঘণ্টা লাগে, কিন্তু আজ এখন পর্যন্ত এখানে দাঁড়িয়ে আছি। কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে জানি না। হাঁটুর ওপর পানি থাকায় বাসের কাছে যেতেই পারছি না। পানি একটু কমলে যেতে হবে।
সকাল আটটার দিকে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমলেও জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে। রাস্তায় চলাচলকারী অনেক যাত্রী ভেজা পোশাক নিয়ে অফিসে যাচ্ছেন।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে ঢাকায় ২ ঘণ্টায় প্রায় ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত ১–২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে।
এদিকে, আবহাওয়া অফিস বলছে, সোমবার (১৮ আগস্ট) পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে আগামী কয়েক দিন সারাদেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, খাল ভরাট ও দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে প্রতি বর্ষায় একই চিত্র দেখা যায়।