ঘুমের সঙ্গে নানা শারীরিক সমস্যার যোগসূত্র রয়েছে। চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যের সঙ্গে ঘুমের সম্পর্ক নিয়ে নিত্যনতুন গবেষণা করছেন। আর তাতে নানা চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসছে।
অনেকেই ঘুমের সময় মুখ খুলে ঘুমান। সেটাকেই স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেন। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, এই লক্ষণ হেলাফেলা করা মোটেও উচিত নয়। অনেকসময় হাঁ করে ঘুমানোর অভ্যাস নানা রোগ বা স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত ঘুমানোর সময় আমাদের নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া উচিত। কিন্তু যদি নাক বন্ধ থাকে কিংবা শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে শুরু করেন।
নাক ও মুখ উভয়ই আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ করে। কিন্তু নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার সময়, বাতাস ফিল্টার হয়ে ফুসফুসে পৌঁছায়। কিন্তু মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে এমনটা হয় না। দীর্ঘক্ষণ মুখ খোলা রেখে ঘুমালে গলায় শুষ্কতা দেখা দেয়। পাশাপাশি মুখে দুর্গন্ধ, গলা ব্যথা এবং দাঁতের সমস্যা হতে পারে।
সর্দি কাশিতে নাক-বন্ধ হয়ে গেলে অনেকেই মুখ খোলা রেখে ঘুমান। আবার নাকের হাড় বাঁকা থাকার কারণেও এমনটা হতে পারে। নাকের মধ্যবর্তী প্রাচীর বাঁকা হয় অনেকের। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ডেভিয়াটেড সেপটাম বলে।
এছাড়াও নাকে অন্য কোনো কারণে বাধা সৃষ্টি হলে, নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া যায় না। দাঁতের গঠনের কারণেও কখনো কখনো এমন সমস্যা হয়ে থাকে।
নবজাতক শিশুদের কারও কারও ক্ষেত্রেও এমন প্রবণতা তৈরি হয়। যদি শিশু ঘুমানোর সময় মুখ খোলা রেখে শ্বাস নেয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হতেই পারে, কোনো কারণে তার নাক বন্ধ কিংবা নাকের হাড়ে বাঁকা রয়েছে।
যদি বড় বাচ্চারা হঠাৎ মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে শুরু করে, তাহলেও অবহেলা করবেন না। হতে পারে সেটি অ্যাডিনয়েডের সমস্যা। অ্যাডিনয়েড গলার ওপরের অংশে থাকা ছোট টিস্যু। যদি তা ফুলে যায়, তাহলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে।
এমন সমস্যা থেকে রেহাই পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নাক বন্ধ থাকলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন অথবা স্যালাইন ওয়াটার স্প্রে নিন। যদি সমস্যাটি অ্যালার্জি, হাঁপানি বা সাইনাসের সংক্রমণ থেকে হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
আজকাল ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ডাক্তাররা ‘মাউথ টেপিং’ সম্পর্কে কথা বলেন। এতে ঘুমানোর সময় মুখে হালকা টেপ বা নরম প্যাচ লাগানো হয়, যাতে ঘুমের সময় মুখ না খোলে এবং নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। কিছু কিছু গবেষণা অনুযায়ী, টেপিং ব্যবহারে ঘুমের সময় নাক ডাকা ও শ্বাসকষ্ট কিছুটা কম হয়।