39224

07/27/2025 থাইল্যান্ডের সঙ্গে ‘অবিলম্বে অস্ত্রবিরতি’ চায় কম্বোডিয়া

থাইল্যান্ডের সঙ্গে ‘অবিলম্বে অস্ত্রবিরতি’ চায় কম্বোডিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৬ জুলাই ২০২৫ ১১:২১

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্তে তুমুল সংঘর্ষের মধ্যে থাইল্যান্ডের সঙ্গে ‘অবিলম্বে’ অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে কম্বোডিয়া।

জাতিসংঘে নিযুক্ত কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত ছেয়া কিও জানিয়েছেন, তার দেশ ‘শর্তহীন’ অস্ত্রবিরতি চায়। তার ভাষ্য, নম পেন এই বিরোধের ‘শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি’ কামনা করে। তবে এখনো পর্যন্ত থাইল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এর আগে শুক্রবার থাইল্যান্ড কম্বোডিয়া সীমান্তঘেঁষা আটটি জেলায় মার্শাল ল’ জারি করে।

শনিবারও দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের খবর মিলেছে। থাইল্যান্ড জানিয়েছে, তাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলের কাছাকাছি নতুন এক এলাকায় কম্বোডিয়ান বাহিনী হামলা চালিয়েছে। তবে দেশটির নৌবাহিনী ওই হামলাকারীদের পিছু হটাতে সক্ষম হয়েছে। এর আগেই থাই কর্তৃপক্ষ সীমান্তবর্তী সুরিন, উবোন রাচাথানি ও শ্রিসাকেত প্রদেশে সংঘর্ষের তথ্য দেয়।

এ পর্যন্ত সংঘর্ষে সেনা ও বেসামরিক নাগরিক মিলিয়ে ৩২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় প্রায় দুই লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সংঘাতের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে উভয় পক্ষই। শুক্রবার থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সতর্ক করে বলেন, দুই দেশের চলমান সীমান্ত সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। তিনি দাবি করেন, সংঘর্ষে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে এবং তা সীমান্তের ১২টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়া বেসামরিক এলাকায় গোলাবর্ষণ চালিয়েছে। কম্বোডিয়ার রকেট হামলার আওতায় পড়ে এমন সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়ার কথাও জানিয়েছে দেশটি।

অন্যদিকে, কম্বোডিয়া অভিযোগ করেছে থাইল্যান্ড তাদের ওপর ক্লাস্টার মিউনিশন বা গুচ্ছ বোমা ব্যবহার করেছে। সাধারণত এ ধরনের অস্ত্র বেসামরিক জনগণের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়, যে কারণে এটি বিশ্বের অধিকাংশ দেশে নিষিদ্ধ।

তবে এই অভিযোগ নিয়ে থাইল্যান্ড এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

বিশ্বের বিভিন্ন নেতা সংঘর্ষ বন্ধে দ্রুত অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তবে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, চলমান সংঘর্ষে তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই। আসিয়ানের বর্তমান চেয়ার দেশ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সীমান্ত সংঘর্ষ শুরুর পরই দুই দেশের মধ্যে আলোচনায় সহায়তার প্রস্তাব দেন। যুক্তরাষ্ট্রও অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধ, বেসামরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।

থাইল্যান্ড বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, সংঘর্ষে তাদের ১৯ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৩ জন বেসামরিক ও ছয় জন সেনা। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদেরও পাঁচ সেনা ও আট বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।

থাইল্যান্ডের দাবি, কম্বোডিয়া সীমান্তের কাছে থাই বাহিনীর ওপর নজরদারি ড্রোন পাঠানোর পর বৃহস্পতিবার সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে কম্বোডিয়া বলছে, পূর্ববর্তী চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে সীমান্তসংলগ্ন একটি খেমার-হিন্দু মন্দিরের দিকে অগ্রসর হয়েই সংঘাত শুরু করেছে থাই বাহিনী।

উল্লেখ্য, দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধের শিকড় শতবর্ষ পেছনে—ফরাসি ঔপনিবেশিকরা কম্বোডিয়া ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই সীমা নির্ধারণ নিয়ে এ বিরোধ শুরু হয়। এর আগে বহুবার এই সীমান্ত বিরোধ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন উভয় পক্ষের সেনা সদস্য ও বেসামরিক মানুষ। সবশেষ উত্তেজনা শুরু হয় মে মাসে, যখন এক সংঘর্ষে কম্বোডিয়ার একজন সেনা নিহত হন। তারপর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এসএন /সীমা

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]