যে কারণে টঙ্গীতে হত্যার পর যুবকের মরদেহ টুকরো করে ফেলে দেয় খুনিরা
প্রকাশিত:
১০ আগস্ট ২০২৫ ১৬:০৩
আপডেট:
১০ আগস্ট ২০২৫ ১৯:০৭

গাজীপুরের টঙ্গীতে ট্রাভেল ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো অলি মিয়া (৩৫) নামের যুবকের মাথাবিহীন ৮ টুকরো লাশের রহস্য উন্মোচন করে ক্লুলেস হত্যা মামলার মূলহোতাসহ তিনজনকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তাররা হলেন– মূলহোতা আপেল মাহমুদ সাদেক (৪২), সাজ্জাদ হোসেন রনি (২৫) ও আপেলের স্ত্রী শাওন বেগম (৩২)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মূলহোতা আপেল মাহমুদ সাদেক নিহত অলি মিয়াকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে র্যাব-১।
র্যাব-১ বলছে, ভুক্তভোগী অলি আসামি আপেল মাহমুদ সাদেকের স্ত্রীর চরিত্র সম্পর্কে খারাপ কথা বলায়, আসামি আপেল মাহমুদের ভাগ্নেকে খুন করার পরিকল্পনা জানতে পারায় ও আসামি সাজ্জাদ হোসেন রনিকে ভিকটিম অলি ২/৩ বছর আগে লোকজন দিয়ে মারধর করায় আপেল ও রনি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অলি মিয়াকে হত্যা করেন।
রোববার (১০ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আশিকুর রহমান। তিনি জানান, গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন টঙ্গী থেকে কালীগঞ্জগামী আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর মাছিমপুর এলাকায় স্টেশন রোড হাজী বিরিয়ানি হাউজ ও নান্না বিরিয়ানি হাউজের সামনে দুটি ট্রাভেল ব্যাগ স্থানীয় লোকজন পড়ে থাকতে দেখে।
পড়ে থাকা ব্যাগ থেকে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ব্যাগ খুলে ট্রাভেল ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় যুবকের অর্ধগলিত ও মাথা বিহীন ৮ খণ্ড লাশ দেখতে পায়।
পরে তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় শনাক্ত করা হয়। নিহত ব্যক্তির নাম অলি মিয়া (৩৫)। তিনি নরসিংদী সদরের করিমপুরের (শুক্কুর আলী মাস্টারের বাড়ি) মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, হত্যাকাণ্ডটি পূর্ব পরিকল্পিত এবং লাশ গুম করার উদ্দেশে মাথার অংশ দুষ্কৃতকারীরা অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে রাখে।
নিহতের স্ত্রী শাহানা আক্তারের ভাষ্য মতে, গত ৪ আগস্ট থেকে ৬ আগষ্ট পর্যন্ত নিহত অলি মিয়ার নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে ৮ আগষ্ট অলি মিয়ার স্ত্রী মৃত্যুর সংবাদ পান। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিহতের স্ত্রী শাহানা আক্তার (২৯) বাদী হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানায় হত্যা মামলা করেন।
এর পরপরই ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তারে র্যাব-১, সিপিসি-২ এর একটি দল মূল পরিকল্পনাকারীকে ধরার জন্য ছায়া-তদন্ত শুরু করে।
গত ৯ আগষ্ট র্যাব-১ এর দল হত্যার ঘটনার মূলহোতা আসামি আপেল মাহমুদ সাদেক (৪২), সাজ্জাদ হোসেন রনি (২৫) ও আপেলের স্ত্রী শাওন বেগম (৩২) চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থানাধীন জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় অবস্থান করছে বলে নিশ্চিত হয়।
ওই সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১ ও র্যাব-৭ এর যৌথ দল সেখানে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ক্লুলেস হত্যা মামলার মূলহোতা আপেল মাহমুদ সাদেক নিহত অলি মিয়াকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। মূলহোতা আপেল মাহমুদ সাদেকের নামে ঢাকা রেলওয়ে থানায় মামলা আছে।
হত্যার নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে র্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, ভুক্তভোগী অলি আসামি আপেল মাহমুদ সাদেকের স্ত্রীর চরিত্র সম্পর্কে খারাপ কথা বলায়, আসামি আপেল মাহমুদের ভাগ্নেকে খুন করার পরিকল্পনা জানতে পারায় ও আসামি সাজ্জাদ হোসেন রনিকে ভিকটিম অলি ২/৩ বছর আগে লোকজন দিয়ে মারধর করায় আপেল ও রনি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অলি মিয়াকে হত্যা করেন।
আসামি আপেল মাহমুদ ও রনি আগে একাধিকবার ভিকটিম অলিকে ট্রেনের নিচে চাপা দেওয়ার জন্য রেললাইনে নিয়ে যায়। এমনকি হত্যাকাণ্ডের দিন গত ৬ আগষ্ট ভোরে অলিকে হত্যার জন্য আসামি আপেল মাহমুদ ও রনি রেললাইনের ওপর নিয়ে যান।
পরে ওই সময় ট্রেন না আসায় অলি, আপেল ও রনি আবার আপেলের বাসায় চলে যান। একই দিন আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা একসঙ্গে সকালের নাস্তা করেন ও নাস্তার পর আসামি আপেলের স্ত্রী রান্না ঘরে থাকা অবস্থায় আসামি আপেল ও রনি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের রুমের দরজা বন্ধ করে ভিকটিম অলিকে বিছানায় ফেলে দড়ি ও বেল্ট দিয়ে পা বেঁধে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
পরে তারা ভুক্তভোগীর লাশ টয়লেটের ভেতর রেখে দেন এবং সন্ধ্যার দিকে বাজার থেকে ছুরি, স্কচটেপ, কালো ব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে আসেন। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে লাশটি টয়লেটের ভেতরে রেখে আসামি আপেল ও রনি বিভিন্ন অংশে টুকরো টুকরো করেন এবং কালো পলিথিনের ভেতরে প্যাকেট করে টয়লেটের সানসেটের উপরে ঢুকিয়ে রাখেন। এসময় আপেলের স্ত্রী শাওন বারান্দায় বসে পাহারা দেন।
আসামিরা গত ৭ আগষ্ট লাশ বাইরে ফেলার সুযোগ পায়নি। পরে লাশ থেকে গন্ধ বের হলে গত ৮ আগস্ট সকাল ৬টার দিকে আসামি আপেল ও রনি পলিথিন ভর্তি লাশ ব্যাগে করে একটি অটোরিকশায় নিয়ে বাসা থেকে টঙ্গী স্টেশন রোডের হাজী বিরিয়ানি হাউজ ও নান্না বিরিয়ানি হাউজের সামনে ফেলে চলে যান।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: