মঙ্গলবার, ৫ই আগস্ট ২০২৫, ২১শে শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


করোনায় আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা পরামর্শ


প্রকাশিত:
২২ মে ২০২১ ১৮:২৫

আপডেট:
৫ আগস্ট ২০২৫ ১২:৩০

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি শিশুদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় নতুন রূপান্তরিত ভাইরাসটির ভিন্নতর বৈশিষ্ট্য এবং জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে শৈথিল্য, স্কুল, কোচিং বন্ধ থাকলেও শিশুদের সঙ্গে নিয়ে বাজার-মলে যাওয়ার প্রবণতা অন্যতম কারণ। একই সঙ্গে ঈদ ভ্রমণের ফলে আক্রান্তের হার আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

লক্ষণ: করোনাভাইরাসে সংক্রমিত বেশির ভাগ শিশুর লক্ষণ এখন পর্যন্ত অসম্পূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণহীনও থাকে। কিছু ক্ষেত্রে হালকা লক্ষণ থাকে। যেমন—

► জ্বর

► নাক দিয়ে পানি ঝরা

► সর্দি-কাশি

► ক্লান্তিবোধ

► গা ম্যাজম্যাজ ও শরীর ব্যথা

► গলা ব্যথা

► ডায়রিয়া

► গন্ধ না পাওয়া বা স্বাদ হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি।

অন্যদিকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তীব্র কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট হয়। কিছু শিশুর পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাও হতে পারে। অনেক শিশুর মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রোম নামের একটি নতুন সিনড্রোম লক্ষ করা গেছে। এতে জ্বর, পেট ব্যথা, বমিভাব ও বমি, ডায়রিয়া, ত্বকের ফুসকুড়ি বা র‌্যাশ, হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালির এবং স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়।

কিছু নির্দেশনা: সম্প্রতি শিশুদের করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শিশুদের করোনাসংক্রান্ত এক নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এতে তাদের করোনাভাইরাস সংক্রমণের বৈশিষ্ট্যগুলোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যা অভিভাবকদের সচেতন করতে সহায়তা করছে।

বাংলাদেশের জাতীয় কভিড-১৯ সংক্রান্ত চিকিৎসা নীতিমালায়ও এ সম্পর্কীয় নির্দেশনা আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি এরই মধ্যে শিশুদের চিকিৎসার একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। এ ক্ষেত্রে কিছু করণীয় হলো—

► যদি কোনো শিশু করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে বলে পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায়, কিন্তু লক্ষণহীন থাকে তাহলে নিয়মিত তার স্বাস্থ্য মনিটর করা প্রয়োজন। কারণ লক্ষণগুলোর প্রাথমিক শনাক্তকরণের ফলে প্রথম দিকেই চিকিৎসা দেওয়া সহজ হয়।

► শিশুর যদি গলা ব্যথা, কাশি এবং রাইনোরিয়ার মতো হালকা লক্ষণ দেখা দেয় কিন্তু শ্বাসকষ্টের সমস্যা না হয়, তাহলে তাদের বাড়িতে রেখেই যত্ন নেওয়া যেতে পারে।

► জন্মগত হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ, দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবন্ধী এবং স্থূলতাসহ অন্তর্নিহিত কো-মরবিড অবস্থার সঙ্গে শিশুদের ক্ষেত্রে অধিকতর যত্নশীল হতে হবে।

হালকা লক্ষণে চিকিৎসা:

► জ্বরের জন্য ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা অন্তর প্যারাসিটামল (প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১০-১৫ মিলিগ্রাম) ব্যবহার করা যেতে পারে।

► কাশি থাকলে লবণমিশ্রিত গরম পানি দিয়ে আদা ও লেবুর রস পান করালে লক্ষণ প্রশমিত হবে।

► পাশাপাশি খেতে হবে পর্যাপ্ত পানি বা তরল এবং পুষ্টিকর খাদ্য।

► হালকা লক্ষণের শিশুদের ক্ষেত্রে ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে মতামত দিয়েছে যে হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন, ফাভিপিরাবির, ইভারমিটিন, আইপিনাবির/রিতোনভির, রিমাদেসিভির, উমিফেনোভাইর, টোকিলিজুমাব, কনভ্যালসেন্ট প্লাজমা ইনফিউশন বা ডেক্সামেথোসোনসহ ইমিউনোমোডুলেটরগুলোর কোনো ভূমিকা নেই।

► শ্বাস-প্রশ্বাসের হার এবং অক্সিজেনের স্তর পরিমাপের জন্য একটি মনিটরিং চার্ট বজায় রেখে দিনে দু-তিনবার পরীক্ষা করা উচিত।

► পাঁজর দেবে যাওয়া, বিবর্ণতা, প্রস্রাবের আউটপুট, তরল গ্রহণ এবং ক্রিয়াকলাপ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

► মা-বাবা বা অভিভাবকদের উচিত ডাক্তারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা।

মাঝারি লক্ষণে চিকিৎসা:

► দুই মাসের কম বয়সীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ৬০ বারের নিচে, এক বছরের কম বয়সীদের ৫০ বারের নিচে, পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের ৪০ বারের নিচে এবং তার অধিক বয়সীদের ৩০ বারের নিচে থাকলে তারা কভিড-১৯-এর মাঝারি লক্ষণযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। এই বয়সে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা ৯০ শতাংশের ওপরে হওয়া উচিত।

► শিশুটি কো-মরবিড সমস্যাযুক্ত না হলে নিয়মিত কোনো ল্যাব পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। তবে মাঝারি কভিড-১৯ শিশুদের ডেডিকেটেড কভিড স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ভর্তি হতে হবে এবং ক্লিনিক্যাল অগ্রগতি তদারক করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মুখে খাবার (ছোট শিশুদের মায়ের দুধ) এবং তরল ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষণাবেক্ষণের দিকে যত্নশীল হতে হবে।

► খাবারের পরিমাণ পর্যাপ্ত না হলে শিরা দিয়ে তরল থেরাপি শুরু করা উচিত।

গুরুতর লক্ষণে চিকিৎসা:

► অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ শতাংশেরও কম এবং সঙ্গে তীব্র শ্বাসকষ্ট অর্থাৎ পাঁজর দেবে যাওয়া ও ঘোঁতঘোঁত শব্দ করে শ্বাস নেওয়া, দুর্বলতা, অবসাদ ও ক্লান্তি গুরুতর কভিড-১৯-এর লক্ষণ। এজাতীয় শিশুদের কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে এবং কারো কারো এইচডিইউ/আইসিইউয়েরও প্রয়োজন হতে পারে।

► তাদের থ্রম্বোসিস, হিমোফ্যাগোসাইটিক লিম্ফোহিসটিওসাইটোসিস, এইচএলএইচ এবং অঙ্গ ব্যর্থতার পরীক্ষাও করা উচিত।

► সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা, যকৃৎ এবং রেনাল ফাংশন পরীক্ষা এবং বুকের এক্স-রে এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক।—কর্টিকোস্টেরয়েডস (ডোজ প্রতি কেজিতে ০.১৫ মিলিগ্রাম) বা অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ (যেমন—জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনপ্রাপ্ত রিমডেসিভিয়ার) লক্ষণগুলো শুরুর তিন দিনের পরে এবং শিশুর লিভার ও রেনাল ফাংশনগুলো স্বাভাবিক কি না তা নিশ্চিত করার পর সীমিত পদ্ধতিতে ব্যবহার করা উচিত।


সম্পর্কিত বিষয়:

করোনা

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top