অকাল বার্ধক্যের জন্য দায়ী ৪০০ জিনের খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা
প্রকাশিত:
২৩ আগস্ট ২০২৫ ১১:২৫
আপডেট:
২৩ আগস্ট ২০২৫ ১৬:৫৩

আমরা প্রায়ই বলি যে মুখের বলিরেখা, ত্বকের দাগ বা চুল পেকে যাওয়া—এগুলোই বার্ধক্যের লক্ষণ। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, বয়স আসলে ধরা পড়ে আমাদের বাহ্যিক রূপের চেয়েও অনেক গভীরে। আমাদের শরীরের জিনের গঠন ও এর কার্যপ্রণালীর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আসল বয়স বাড়ার রহস্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জিনের এই পরিবর্তনগুলোই আমাদের বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। জিনগত কারণেই অকাল বার্ধক্য নেমে আসে শরীর জুড়ে। ত্বকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ‘প্রিম্যাচিয়োর রিঙ্কলস’।
আমেরিকার নিউ ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডার-এর বিজ্ঞানীরা অকাল বার্ধক্যের জন্য দায়ী ৪০০ জিন চিহ্নিত করার দাবি করেছেন। এই আবিষ্কারটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং পরবর্তীকালে এই জিনগুলো কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে আরও গবেষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বার্ধক্য প্রতিরোধ বা চিকিৎসার নতুন পথ খুলে দিতে পারে। নেচার জেনেটিক্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তাদের গবেষণাপত্র।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ওই জিনগুলো সক্রিয়তার কারণেই অনেকে কম বয়সেই অনেকে বুড়িয়ে যান। আবার অনেকের ৯০ বছরেও মুখে স্পষ্ট হয় না বলিরেখা। বস্তুত, ওই জিনগুলো বার্ধক্য প্রক্রিয়ার বিভিন্ন কারণকে প্রভাবিত করে। গবেষণা বলছে, একাধিক জৈবিক পথ ধরে শরীর এবং মনে জরার আগমন হয়। ওই জিনগুলো বিভিন্ন বয়সজনিত শারীরবৃত্তীয় ও বিপাকীয় সমস্যা বৃদ্ধি করে বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করে। তাদের সক্রিয়তার কারণেই কম বয়সেই হয় ডায়াবিটিস, অ্যালঝাইমার্স বা বাত। শরীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হারানোয় ঘন ঘন ‘ফ্লু’তে আক্রান্ত হতে হয়।
চলতি মাসে নেচার জেনেটিক্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, কলোরাডোর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন বিজ্ঞানীদের ওই গবেষণাপত্র। সেখানে জরার আগমনের সঙ্গে শরীরে বাসা বাধা একাধিক দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতাকে চিহ্নিত করে সেগুলোর জন্য দায়ী জিনগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘জিরোসায়েন্স হাইপোথিসিস’ মেনে জিনগুলোকে মোট সাতটি গোত্রে বিভাজন করেছেন গবেষকেরা।
গবেষক দলের নেতা ইসাবেল ফুট জানিয়েছেন, অকাল বার্ধক্য রুখতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে এই গবেষণার ফলাফল।
আমেরিকায় চিকিৎসকেরা মূলত ৩০টি সূচক ব্যবহার করে দুর্বলতা মূল্যায়ন করেন। হাঁটার গতি, ওজন তোলার ক্ষমতা, শক্ত করে ধরার (গ্রিপ) সামর্থ্য থেকে শুরু করে স্নায়বিক সক্ষমতা এমনকি, স্মৃতিশক্তি পর্যন্ত অনেক কিছুই রয়েছে এই তালিকায়।
গবেষকেরা দেখেছেন, ৬৫ বছরে পৌঁছে ৪০ শতাংশ মার্কিন নাগরিকই দুর্বলতায় আক্রান্ত হন। আর এর নেপথ্যে থাকা মোট ৪০৮টি জিনকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন তারা। ইসাবেলের কথায়, ‘ওই জিনগুলো অস্বাস্থ্যকর বার্ধক্য ডেকে আনে।’ তবে এক সঙ্গে সবগুলো একই মানব দেহে সক্রিয় হয় না। তাই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী কোনো বৃদ্ধ অ্যালঝাইমাআর্সে আক্রান্ত হতে পারেন। আবার প্রবল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অকালবৃদ্ধ হতে পারেন তীক্ষ্ণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী!
মানব শরীরের অধিকাংশ কোষে ক্রোমোজোম থাকে ২৩ জোড়া করে। শরীরের ক্রোমোজমে যে ডিএনএ (ডিঅক্সি-রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) থাকে, তার একটা ‘লেজ’ (টেল) থাকে। সেই ‘লেজ’টার নাম—টেলোমেয়ার। বার্ধক্যের দিকে মানুষ যত এগোতে থাকে, ততই আকারে ছোট হতে থাকে সেই টেলোমেয়ার। বস্তুত, টেলোমেয়ারের ‘ক্ষয়’ রোধ করে দিতে পারলেই রুখে দেওয়া যেতে পারে শরীরবৃত্তীয় অবক্ষয়। মিলতে পারে ‘অমৃতকুম্ভের’ সন্ধান। আমাদের দেহকোষের ডিএনএগুলো অনবরত বিভাজিত হতে থাকে। তাই অত্যাধুনিক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে ভবিষ্যতে ‘আয়ুষ্মান জিন’ উদ্ভাবনের মাধ্যমে জরা নিয়ন্ত্রণের আশা রয়েছে। ‘নিউ ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডার’-এর গবেষণা কতটুকু আলোর সন্ধান দেবে? এখন দেখার বিষয়.!
এসএন/রুপা
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: