পাক-ভারত সংঘাতের প্রভাব ক্রীড়াঙ্গনে, থমকে যেতে পারে যেসব খেলা
প্রকাশিত:
৭ মে ২০২৫ ১৪:২৩
আপডেট:
৮ মে ২০২৫ ০৫:০৪

পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরসহ দেশটির কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। গতকাল মধ্যরাতে দেশটির মোট নয়টি জায়গায় চালানো এই হামলায় নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ জনে। পাল্টা আঘাত করেছে ইসলামাবাদও। এখন পর্যন্ত ভারতের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান পাকিস্তান ধ্বংস করেছে বলে দাবি দেশটির সরকারের।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের সংঘাতের প্রভাব নিশ্চিতভাবেই পড়তে যাচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনেও। কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই। নতুন করে উত্তেজনার ঢামাঢোলের মধ্যে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেট। সংকট দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ব ক্রিকেটেও এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।
এশিয়া কাপ
কদিন আগে ভারত জানিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তানের বিপক্ষে আর কখনোই দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অংশ নেবে না তারা। যদিও রাজনৈতিক কারণে ২০১২ সালের পর থেকেই বন্ধ আছে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। ক্রিকেট দুনিয়াতে এই দুই দেশের লড়াই এখন কেবল এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপের মাঝে সীমাবদ্ধ। যদিও এই দুই বৈশ্বিক ইভেন্টে নিজেদের অবস্থান কেমন হবে তা এখনও পর্যন্ত জানায়নি দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড।
নতুন করে গুঞ্জন উঠেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ২০২৫ সালের এশিয়া কাপ আয়োজনও স্থগিত হয়ে যেতে পারে। আসন্ন এশিয়া কাপের আয়োজক ভারত। যদিও পাকিস্তানের আপত্তির মুখে হাইব্রিড মডেলে যুক্ত হতে পারে শ্রীলঙ্কার নামটাও। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে হওয়া এশিয়া কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ক্ষেত্রে ভারত নিজেদের সব ম্যাচই খেলেছিল নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। ২০২৫ এশিয়া কাপেও সেই সম্ভাবনাই ছিল। কিন্তু এরইমাঝে প্রশ্নবোধক চিহ্ন পড়েছে এশিয়া কাপের আয়োজনের প্রশ্নে।
ভারতীয় বোর্ডের এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে স্পোর্টস তাক জানিয়েছে, এ মুহূর্তে এশিয়া কাপ সম্পর্কে মন্তব্য করার মতো কিছু নেই, তবে সমস্ত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। যদিও এশিয়া কাপ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। উপযুক্ত সময়ে আমরা আমাদের অবস্থান জানাবো।
পিএসএল ও আইপিএল
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেই চলছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আইপিএল ও পিএসএল। সংঘাতকে কেন্দ্র করে খেলা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেই সঙ্গে বিদেশি ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার একটা প্রশ্নতো থাকছেই। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) খেলতে এই মুহূর্তে পাকিস্তানে অবস্থান করা দুই বাংলাদেশি নাহিদ রানা ও রিশাদ হোসেনকে নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বিসিবি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'গত ২৪ ঘণ্টায় পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। পিএসএলে (পাকিস্তান সুপার লিগ) খেলতে যাওয়া বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা বোর্ডের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
চলমান পিএসএলে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন ও নাহিদ রানার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বিসিবি। বিসিবি সভাপতি ফরুক আহমেদ ব্যক্তিগতভাবেও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পিএসএলের প্রধান নির্বাহী সালমান নাসির ও রিশাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন, যাতে খেলোয়াড়রা মানসিকভাবে শান্ত ও নিরাপদ বোধ করেন।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ও ইসলামাবাদে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করছে বিসিবি, যাতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়।
ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ
আগামী আগস্টে সাদা বলের ফরম্যাটে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল ভারতের। তিন ওয়ানডে এবং তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টির সিরিজটির সময়সূচিও ইতোমধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছে বিসিবি। তবে বাংলাদেশের সঙ্গেও বেশ কয়েক মাস ধরেই শীতল সম্পর্ক চলছে ভারতের। এর মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে আগস্টে ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
‘এই সফর ক্যালেন্ডারের অংশ (পূর্ব নির্ধারিত) হলেও এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ভারতীয় দল যে বাংলাদেশে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাচ্ছে না, সেই সম্ভাবনাই বেশি’—সূত্রের বরাত দিয়ে বলছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ
চলমান অস্থিরতার মধ্যেই চলতি মাসের শেষ দিকে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে সেখান থেকেই বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে যাবে। ২৫, ২৭ ও ৩০ মে এবং ১ ও ৩ জুন লাহোর আর ফয়সালাবাদে হবে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে —বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সফর হবে কি না। অবশ্য এ নিয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বিসিবি।
নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ
আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টটির ১৩তম সংস্করণে অংশগ্রহণ করবে ৮টি দল। যেখানে নাম আছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশেরও। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই টুর্নামেন্টটির ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: