জুমার আদব: মুসল্লিদের টপকে সামনে যাওয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
প্রকাশিত:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১২
আপডেট:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৪৬

জুমাবার মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। হাদিসে এ দিনকে ‘সাপ্তাহিক ঈদ’ বলা হয়েছে। তাই জুমার দিনের আমল ও আদব-শিষ্টাচারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- মসজিদে গিয়ে মুসল্লিদের টপকে বা ফাঁক করে সামনের দিকে না যাওয়া।
অনেক সময় কিছু মানুষ দেরিতে মসজিদে পৌঁছানোর পরও সামনের কাতারে জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা মুসল্লিদের কাঁধ বা মাথার উপর দিয়ে লাফিয়ে কিংবা ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যান। এটি জুমার দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব পরিপন্থী কাজ। এভাবে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে অন্যের মনোকষ্ট ও শারীরিক অসুবিধা হয়, নামাজে একাগ্রতা নষ্ট হয় এবং সাধারণভাবে বিরক্তির সৃষ্টি হয়। ইসলামে কোনো মুসলিমকে ইচ্ছাকৃত কষ্ট দেওয়া বৈধ নয়।
হাদিসে জুমার দিনের আদব সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, যথাসাধ্য পবিত্রতা অর্জন করল, তেল ব্যবহার করল, সুগন্ধি লাগাল, তারপর মসজিদে গেল এবং দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক তৈরি করে (টপকে) সামনে এগোল না, তারপর যতটুকু সম্ভব নামাজ পড়ল এবং ইমাম খুতবা দেওয়া শুরু করলে নীরব থাকল, তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহ) মাফ করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৮৮৩)
তাই মসজিদে গেলে যেখানে জায়গা পাওয়া যায়, সেখানেই বসে পড়া উচিত। সামনের কাতারে যাওয়ার সওয়াব অর্জন করতে চাইলে আগেভাগে মসজিদে আসার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
সামনের কাতারে বসার ফজিলত ও তাড়াতাড়ি আসার গুরুত্ব
সামনের কাতারে নামাজ আদায়ের বিশেষ সওয়াব রয়েছে। তাই আগে এসে ভালো জায়গা নেওয়ার জন্য হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। নবী (স.) বলেছেন- ‘জুমার দিন ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে পর্যায়ক্রমে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। সর্বপ্রথম যে আসে, সে যেন একটি উট দান করল; তারপর যে আসে সে যেন একটি গাভী দান করল; তারপর যে আসে সে যেন একটি মুরগি দান করল; তারপর যে আসে সে যেন একটি ডিম দান করল। তারপর ইমাম যখন খুতবা দিতে আসেন, ফেরেশতারা তাদের লেখা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যান।’ (সহিহ বুখারি: ৮৮২)
আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) বলেছেন- ‘লোকেরা যদি জানত আজান দেওয়া ও প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার মধ্যে কী সওয়াব রয়েছে, তাহলে তারা নিশ্চয়ই এর জন্য লটারির মতো প্রতিযোগিতা করত।’ (সহিহ বুখারি: ৬১৫)
সুতরাং, সামনের কাতারে নামাজ পড়ার সওয়াব পেতে হলে আগে থেকে মসজিদে আসা জরুরি। পরে এসে অন্য মুসল্লিদের হয়রানি করে সামনে যাওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়।
খুতবা চলাকালে নীরবতা ও মনোযোগ
জুমার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আদব হলো- খুতবা চলাকালে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থাকা এবং ইমামের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনা। এ সময় কথা বলা, অন্যকে কথা বলতে নিষেধ করা বা কোনো ধরনের অনর্থক কাজে লিপ্ত হওয়া নিষেধ।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন- ‘জুমার দিন ইমাম খুতবা দিতে দাঁড়ালে যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে ‘চুপ থাক’ বলো, তাহলে সেও অনর্থক কথা হলো।’ (সহিহ বুখারি: ৯৩৪, মুসলিম: ৮৫১)
আরেক হাদিসে হজরত আউস ইবনে আউস (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালোভাবে গোসল করবে, তারপর তড়িৎভাবে মসজিদে আসবে, হেঁটে আসবে (অযথা বাহনে চড়বে না), ইমামের কাছাকাছি বসবে, খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং কোনো অনর্থক কাজ করবে না, তার প্রতিটি কদমের বদলে এক বছর নফল রোজা ও এক বছর নফল নামাজের সওয়াব দেওয়া হবে।’ (সুনান আবু দাউদ: ৩৪৫)
সর্বোপরি, জুমার দিনের পূর্ণ ফজিলত পেতে হলে আমাদেরকে সুন্নাহ মোতাবেক আমল করতে হবে। মসজিদে আগেভাগে এসে সামনের কাতারে বসার চেষ্টা করা উচিত, কিন্তু দেরি করে এলে কারও উপর দিয়ে কিংবা ফাঁক করে সামনে এগোনো যাবে না। খুতবার সময় সম্পূর্ণ নীরব ও একাগ্র থাকতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে জুমার দিনের আদব ও ফজিলত যথাযথভাবে অনুধাবন করে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: