সোমবার, ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১শে ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


জানেন কি মুসলিমের এই ৩ অধিকারে হাত দেওয়া হারাম?


প্রকাশিত:
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:৫৯

আপডেট:
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৯

ছবি- সংগৃহীত

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এটি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পথনির্দেশ করে। এর মূল ভিত্তিগুলোর একটি হলো- পারস্পরিক শ্রদ্ধা, দায়িত্ববোধ এবং নিরাপত্তা। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর একটি যুগান্তকারী ঘোষণা মুসলিম সমাজের সার্বিক নিরাপত্তা ও ভ্রাতৃত্ববোধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে।

তা হলো- كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ ‘প্রত্যেক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের রক্ত, সম্পদ এবং সম্মান (ইজ্জত) হারাম।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৪/ ৪৩৫) এই হাদিসকে ইসলামি সমাজব্যবস্থার জন্য একটি ‘সামাজিক নিরাপত্তা সনদ’ বলা হয়, যা ব্যক্তিগত অধিকার ও সামাজিক শৃঙ্খলার এক অনন্য দিকনির্দেশনা।

কোরআনের আলোকে এই হাদিসের ভিত্তি

জীবনের পবিত্রতা: وَ لَا تَقۡتُلُوا النَّفۡسَ الَّتِیۡ حَرَّمَ اللّٰهُ اِلَّا بِالۡحَقِّ ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করো না।’ (সুরা আনআম: ১৫১)
সম্পদের নিরাপত্তা: وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ ‘তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না।’ (সুরা বাকারা: ১৮৮)
সম্মানের রক্ষা: وَلَا يَغْتَب بَعْضُكُم بَعْضًا ‘তোমরা একে অপরের গিবত (অপবাদ) করো না।’ (সুরা হুজুরাত: ১২)

হাদিসের তাৎপর্য ও মূল বার্তা

রাসুল (স.) এই হাদিসে মুসলিম জীবনের তিনটি মৌলিক অধিকার নিরঙ্কুশভাবে হারাম বা পবিত্র ঘোষণা করেছে। অন্যান্য হাদিসেও এর সমর্থন রয়েছে।
১. জীবন: ‘কেউ নিজের ক্ষতি করবে না এবং অপরের ক্ষতিও করবে না।’ (ইবনে মাজাহ: ২৩৪০)
২. সম্পদ: ‘যে ব্যক্তি এক বিঘত জমিও অন্যায়ভাবে দখল করে, কেয়ামতের দিন তার গলায় সাত স্তরের জমিন ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি: ২৪৫২)
৩. সম্মান: ‘তিনি (স.) জাহান্নামে দেখলেন, একদল লোক তামার তৈরি নখ দিয়ে অনবরত নিজেদের মুখমণ্ডল ও বুকে আঁচড় মারছে। জিবরাইল (আ.) বললেন, এরা মানুষের গোশত খেতো (গিবত ও পরনিন্দা করত)। (আবু দাউদ: ৪৮৭৮, মুসনাদে আহমদ: ৩/২২৪)

বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা

সাইবার অপরাধ ও সামাজিক মিডিয়ায়: অন্যের সম্মান নষ্ট করা এখন এক ক্লিকে সম্ভব। অথচ এটি সরাসরি এই হাদিসের লঙ্ঘন।
আর্থিক প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গ: ধর্মীয় মুখোশ পরে দান-সাহায্য বা ব্যবসায় প্রতারণা করা ইসলামের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। আর সরাসরি চাঁদা দাবি করা বা ঘুষ খাওয়া তো স্পষ্ট জুলুম।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও খুনোখুনি: মুসলমানে মুসলমানের বিরুদ্ধে রক্তপাত করা আজকের বাস্তবতা, অথচ কেয়ামতের দিন এর জন্য জবাবদিহি ভয়াবহ হবে।

এই হাদিস থেকে ব্যক্তিগত শিক্ষাগ্রহণ

মুসলিম ভাইয়ের বিরুদ্ধে গিবত, অপমান বা ট্রল থেকে বিরত থাকা
কারো জান-মাল-ইজ্জতের ক্ষতি না করা
সমাজে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হওয়া
নিজের আচরণে এ হাদিস বাস্তবায়নের চেষ্টা করা
এই হাদিস কেবল একটি নৈতিক বার্তা নয়; এটি আইনি কাঠামো, একটি নৈতিক রোডম্যাপ এবং এক আধ্যাত্মিক চুক্তি, যা একটি ইসলামি সমাজে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা ও সুবিচার নিশ্চিত করে। রাসুল (স.)-এর এ হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয়- অপর মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান হরণ করা আল্লাহর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার শামিল। যারা এই হাদিস অনুসরণ করে, তারা কেবল একজন ভালো মুসলিম নয়; তারা মানবিক, ন্যায়নিষ্ঠ ও পরকালকেন্দ্রিক চিন্তাশীল ব্যক্তি।

সংক্ষিপ্ত বার্তা: একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় পরিচয় হবে- সে তার ভাইয়ের জান-মাল-ইজ্জতের রক্ষক, কখনোই ভক্ষক নয়।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top