মঙ্গলবার, ২৬শে আগস্ট ২০২৫, ১১ই ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


জ্ঞানার্জন: যে ইবাদত আপনাকে করে আল্লাহর ‘পরিবারের’ সদস্য


প্রকাশিত:
২৬ আগস্ট ২০২৫ ১৭:০৩

আপডেট:
২৬ আগস্ট ২০২৫ ২১:২৬

ছবি সংগৃহীত

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এটি কেবল কিছু ইবাদতের সমষ্টি নয়; বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা।

দিকনির্দেশনায় জ্ঞানার্জনকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে জ্ঞানার্জনকে ‘ইবাদত’, এমনকি ‘ফরজ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি আল্লাহর বিশেষ রহমত ও ভালোবাসার নিদর্শনও বটে। এই প্রতিবেদনে কোরআন, হাদিস এবং আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে জ্ঞানার্জনকে ইবাদত হিসেবে তুলে ধরা হবে এবং জীবনের সর্বস্তরে এর গুরুত্ব আলোচনা করা হবে।

১. জ্ঞানার্জন কেন ইবাদত?
ইসলামে জ্ঞানার্জন একটি মৌলিক ইবাদত, কারণ এটি সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ এবং তাঁর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে সর্বপ্রথম যে আয়াত নাজিল হয়েছিল, তা ছিল ‘ইক্বরা’ বা ‘পড়ো’। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জ্ঞান অর্জনের যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা থেকে এর অপরিহার্যতা বোঝা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন- يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ “আল্লাহ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।” (সুরা মুজাদিলা: ১১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা প্রিয় রাসুলকে জ্ঞান অর্জনের দোয়া করার শিক্ষা দিচ্ছেন- وَقُل رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا “এবং বলুন, হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।” (সুরা ত্বাহা: ১১৪)
এসব আয়াত প্রমাণ করে যে, জ্ঞানার্জন একটি মহান ইবাদত।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- “আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন।” (বুখারি ও মুসলিম) তিনি আরও বলেন- “প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ ও নারীর ওপর জ্ঞানার্জন করা ফরজ।” (ইবনে মাজাহ) দ্বীনি আলেমরা আল্লাহর পরিবারভুক্ত ও বিশেষ বান্দার অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে আল্লাহর কিছু পরিবারভুক্ত লোক আছে।’ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, তারা কারা? তিনি বললেন, ‘যারা কোরআনের ধারক-বাহক; এরা আল্লাহর পরিবারভুক্ত ও তার বিশেষ লোক।’ (তারগিব ওয়াত তারহিব: ০২/৩০৩)
এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে- জ্ঞানার্জন আল্লাহর প্রিয় ইবাদত এবং একজন মুমিনের জন্য অপরিহার্য।

২. জ্ঞান ও আমলের সম্পর্ক
শুধু জ্ঞান থাকলেই চলবে না, সেই জ্ঞান অনুযায়ী আমলও করতে হবে। কারণ, জ্ঞান ও আমল পরস্পরের পরিপূরক। সঠিক জ্ঞান না থাকলে আমল শিরক, বিদআত বা ভুল পদ্ধতিতে হতে পারে। জ্ঞান অর্জন করে তা যথাযথ কাজে না লাগানো আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। রাসুল (স.) এই সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন- “যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের পথে চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন... আলেমরা নবীদের উত্তরাধিকারী।” (আবু দাউদ ও তিরমিজি)

৩. জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জ্ঞানের গুরুত্ব
জ্ঞান শুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞান মানুষকে অজ্ঞতা ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে। এটি তার সঠিক বিশ্বাস ও ঈমানকে শক্তিশালী করে। জ্ঞান মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। জ্ঞান মানুষকে পরিবারের হক, ন্যায়বিচার, সততা ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। একটি সুস্থ ও উন্নত সমাজ গঠনের জন্য জ্ঞানের বিকল্প নেই। কোরআনে বলা হয়েছে- ‘তুমি জিজ্ঞাসা করো, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান?” (সুরা যুমার: ৯)

ইসলাম হালাল উপার্জন ও কাজের উৎকর্ষতার প্রতি জোর দেয়। এই উৎকর্ষ অর্জনে জ্ঞানই মূল চাবিকাঠি। রাসুল (স.) বলেছেন- “আল্লাহ চান, তোমরা যখন কোনো কাজ করো, তা সুন্দরভাবে করো।” (বাইহাকি)
সঠিক আকিদা, হালাল-হারামের জ্ঞান, ইবাদতের সঠিক পদ্ধতি এবং নতুন সমস্যার ইসলামিক সমাধান প্রদানের জন্য গভীর দ্বীনি জ্ঞানের বিকল্প নেই।

৪. জ্ঞানার্জনে অবহেলার পরিণতি
অজ্ঞতা মানুষকে শিরক, বিদআত ও অন্যায়ে নিমজ্জিত করে। কোরআনে সতর্ক করা হয়েছে- “দুর্ভোগ তাদের জন্য, যাদের অন্তর কঠিন, যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ।” (সুরা যুমার: ২২)

করণীয়
কোরআন ও হাদিস থেকে এটি স্পষ্ট যে, জ্ঞানার্জন আল্লাহর নির্দেশিত একটি ফরজ ইবাদত এবং নেক আমলের ভিত্তি। এটিই আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার পথ। এই জ্ঞানকে জীবনের অংশ করে তুলতে আমাদের কিছু ব্যবহারিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যেমন-

ব্যক্তিগত পর্যায়ে: প্রতিদিন দ্বীনি ও উপকারী জ্ঞান অর্জনে সময় দিন এবং জ্ঞান ও আমলের তাওফিকের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।

পারিবারিক পর্যায়ে: সন্তানদের জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত করুন এবং তাদের জন্য মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।

সামাজিক পর্যায়ে: মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা, গবেষণা কেন্দ্র ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দিন।

আসুন, আমরা জ্ঞানার্জনের এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করি এবং তা অনুযায়ী আমল করে নিজেদের জীবনকে আলোকিত করি। জ্ঞানই সেই আলোকবর্তিকা যা আমাদের আল্লাহর নৈকট্য, সৃষ্টির কল্যাণ এবং জীবনের চূড়ান্ত সফলতার পথে পরিচালিত করবে।

ডিএম/রিয়া


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top