যার কোরআন তেলাওয়াত শুনে কেঁদেছিলেন প্রিয়নবী (স.)
প্রকাশিত:
২৪ জুন ২০২৫ ১৫:২২
আপডেট:
২৪ জুন ২০২৫ ২০:০৮

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি প্রিয়নবী (স.)-এর ছিল গভীর ভালোবাসা ও মমত্ব। তাঁর জীবনজুড়েই ছিল কোরআনের অনুরণন। কখনো নামাজে, কখনো গভীর রাতে একাকী, তাঁর প্রতিটি মুহূর্তেই কোরআন তেলাওয়াত ছিল একটি নিয়মিত আমল।
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (স.) নামাজে দাঁড়িয়ে এত দীর্ঘ সময় কোরআন তেলাওয়াত করতেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত। (সহিহ মুসলিম: ২৮১৯, ২৮২০)
তিনি যেমন নিজে কোরআন পাঠ করতেন, তেমনি অন্যের মুখ থেকেও শুনতে ভালোবাসতেন। একবার নবীজি (স.) সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে বললেন- ‘আমাকে কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাও।’ ইবনে মাসউদ (রা.) বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলেন- ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনাকে তেলাওয়াত শোনাব? অথচ কোরআন তো আপনার ওপরই নাজিল হয়েছে!’ নবীজী বললেন- ‘আমি চাই, কাউকে তেলাওয়াত করতে শুনি।’ (সহিহ বুখারি: ৫০৫৫, ৪৫৮২)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সুরা নিসা থেকে তেলাওয়াত শুরু করলেন। যখন তিনি এ আয়াতে পৌঁছলেন— فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍۭ بِشَهِيدٍۢ وَّ جِئْنَا بِكَ عَلَىٰ هَٰٓؤُلَآءِ شَهِيدًۭا ‘তখন তাদের অবস্থা কী হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী আনব, আর তোমাকে (হে নবী!) এই লোকদের উপর সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব?’ (সুরা নিসা: ৪১)
নবীজি বললেন- ‘ঠিক আছে।’ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন- ‘আমি নবীজির দিকে তাকিয়ে দেখি, তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।’ (সহিহ বুখারি: ৫০৫৫, ৫০৪৯)
মূলত নবীজি (স.) ছিলেন কোরআনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। যখন তিনি নিজেই কোরআনের আয়াত শুনে কেঁদে ফেলেন, তখন বুঝে নিতে হয়—এই কিতাব শুধু পড়ার নয়, হৃদয়ে ধারণ করার, বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করার জন্য।
তিনি কেঁদেছিলেন কেয়ামতের সেই দৃশ্য কল্পনায়, যেখানে তিনি থাকবেন সাক্ষী হয়ে, তাঁর উম্মতের প্রতি দায়িত্ব পালনের প্রমাণ দিবেন। অথচ আমাদের অনেকেই কোরআনের সঙ্গে বছরের পর বছর দূরত্ব রেখে চলে। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—কোরআন কেবল পাঠ নয়, আত্মবিশ্বাস, আত্মসমর্পণ ও আত্মসংবেদনার আহ্বান।
আসুন, আমরাও কোরআনের প্রতি সেই ভালোবাসা, সেই শ্রদ্ধা ও সেই দায়িত্ববোধ গড়ে তুলি—যার প্রতিচ্ছবি ছিলেন আমাদের প্রিয়নবী (স.)। আল্লাহ যেন আমাদেরও তেলাওয়াতকারীদের কাতারে, তেলাওয়াত শ্রবণকারীদের ও কোরআনের সমাজ বিনির্মাণকারীদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করেন। আমিন।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: