রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে গতকাল ভারত ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হয়েছে। একই সময়ে পাকিস্তান ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও ইসলামাবাদে বৈঠক করেছেন। বৃহস্পতিবারই পাকিস্তান সফরে যান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সম্প্রতি তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছিলেন দিল্লিতে। এরপর তিনি আফগানিস্তানে যান এবং সেখান থেকে যান পাকিস্তানে। আর চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এই সফরের ঘটনাপ্রবাহের ওপর কড়া নজর রাখছে ভারত।
বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে ওয়াং ই পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারের সঙ্গে বৈঠক করেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘উভয় পক্ষই পাকিস্তান-চীন সম্পর্কের পুরো দিক পর্যালোচনা করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে মতামত বিনিময় করেছে। তারা চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) ২.০, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর আলোচনা করেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পাকিস্তান ও চীনের নেতারা একমত হয়েছেন, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব গুরুত্বপূর্ণ।'
এদিকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসিম মুনিরের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন ওয়াং ই। সম্প্রতিক দু্ই মাসের ব্যবধানে দুবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন মুনির। তার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই আবহে মুনির এবং ওয়াংয়ের বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিপিইসি কাঠামোর আওতায় পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য একটি নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করেছে। বিশেষ করে যখন ভারত-চীন নিজেদের সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর দিকে জোর দিচ্ছে, তখন অন্য এক ফ্রন্টে চীনের জন্য ভারতের কপালে চীন্তার ভাঁজ পড়তে পারে।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের কাশগর ও পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দরকে সংযুক্ত করে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত এই সিপিইসি করিডোর। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক, রেলপথ, পাইপলাইন, জ্বালানি পরিকাঠামো এবং গোয়াদর বন্দর। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, করিডোরটি মূল পাকিস্তানে প্রবেশের আগে পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে গেছে, যা ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা।
এই সিপিইসির বিকল্প হিসেবে ভারত চাবাহার বন্দর এবং ভারত-মধ্য প্রাচ্য-ইউরোপ করিডোর (আইএমইসি) প্রকল্পের ওপর জোর দিয়েছে। ভারত জাতিসংঘে সিপিইসি নিয়ে আপত্তি তুলেছে এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) সম্মেলন বয়কট করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে চিড় ধরায় আপাতত আইএমইসি প্রকল্পের অগ্রগতি ধীর। এরই মধ্যেই সিপিইসিকে আফগানিস্তানে প্রসারিত করার কথা ভাবছে চীন। এই সবের দিকেই ভারতের কড়া নজর থাকবে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস