40984

08/19/2025 ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষ

আদালত প্রতিবেদক

১৯ আগস্ট ২০২৫ ১৩:৪৬

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় সংঘটিত ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে হাইকোর্ট থেকে দেওয়া খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের কাছে তারেক রহমান ও বাবরের খালাস বাতিলের আবেদন জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে এ মামলার তৃতীয় দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী শিশির মনির।

এর আগে, গত বছরের ১ ডিসেম্বর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। এরপর ১৯ ডিসেম্বর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায় প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে ‘লিভ টু আপিল’ করে। চলতি বছরের ১ জুন আপিল বিভাগের অনুমতি পাওয়ার পর শুরু হয় চূড়ান্ত শুনানি।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো সেই ভয়াবহ হামলায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন আরও তিন শতাধিক নেতাকর্মী। এই ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়।

তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন প্রথম অভিযোগপত্র দেওয়া হয়, যাতে ২২ জনকে আসামি করা হয়। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আরও ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ফলে মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে। এর মধ্যে তিন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলায় বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৪৯ জন।

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার রায় ঘোষণা করে। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই দণ্ডে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার আদেশ দেওয়া হয় এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলটির চেয়ারপারসনের সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এছাড়া পুলিশের সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগনে সাবেক নৌবাহিনীর কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ডিউক, ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। কিছু আসামিকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এই রায়ের পর ২৭ নভেম্বর মামলার ডেথ রেফারেন্সসহ সব নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর আসামিরা পৃথকভাবে আপিল করেন।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়। এরপর ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

এসএন/রুপা

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]