আল্লাহ তায়ালা এক ইলাহ, তার কোনো শরিক নেই। তিনিই সবাইকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে কেউ সৃষ্টি করেনি। একজন মুসলিমের ঈমানদার হওয়ার জন্য এই বিশ্বাস অবশ্যই রাখতে হবে। কালিমা তাইয়্যেবা এবং কালিমা শাহাদাতে একজন মুসলিমকে এই সাক্ষ্য দেওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা নিজেও এই সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনিই একমাত্র ইলাহ, ফেরেশতা এবং জ্ঞানীরাও তার এক ইলাহ হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করে থাকেন। বর্ণিত হয়েছে—
شَهِدَ اللّٰهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ وَ الۡمَلٰٓئِكَۃُ وَ اُولُوا الۡعِلۡمِ قَآئِمًۢا بِالۡقِسۡطِ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَكِیۡمُ
আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, নিশ্চয় তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। আর ফেরেশতাগণ এবং জ্ঞানীগণও, আল্লাহ ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই, (তিনি) পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা আল ইমরান, আয়াত : ১৮)
এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষিত সম্পর্কে বাগবী, কালাবী থেকে বর্ণনা করেছেন, শামদেশের দু'জন ইহুদী আলেম রাসুল (সা.)-এর দরবারে হাজির হলেন। মদীনায় এসেই তারা বলতে শুরু করলেন—
এ তো সেই শহর যেখানে আবির্ভূত হবেন শেষ নবী মোহাম্মদ। রাসুল (সা.)- কে দেখেই তারা চিনতে পারলেন। বললেন, আপনি কি মোহাম্মদ? তিনি বললেন, হ্যা। তারা পুনরায় বললেন, আপনি কি আহমদ? রাসুল (সা.) বললেন, আমি আহমদও। মোহাম্মদও | তারা বললেন, আমরা একটি প্রশ্ন করতে চাই? উত্তর দিতে পারলে আমরা আপনাকে মেনে নেবো। রাসুল (সা.) বললেন, বলুন।
তারা বললেন, আল্লাহর কিতাবে সবচেয়ে বড় সাক্ষ্য কোনটি? এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতেই এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর ইহুদী আলেম দু'জন মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন ।
হজরত ইবনে আব্বাস বলেছেন, আল্লাহ সকল প্রাণীর শরীর তৈরীর চার হাজার বছর আগে রূহ (প্রাণ) সৃষ্টি করেছেন। তারও চার হাজার বছর আগে নির্ধারণ করেছেন তাদের রিজিক। সৃষ্টির অভ্যুদয়ের পূর্বে আল্লাহ ছিলেন একা । আকাশ পৃথিবী ছিলো না। পাপ পুণ্যও ছিলো না। তখনই তিনি তার এক ইলাহ হওয়ার সাক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন।
অর্থাৎ যে আল্লাহ বিশ্ব জাহানের সমস্ত তত্ত্ব, সত্য ও রহস্যের প্রত্যক্ষ জ্ঞান রাখেন, যিনি সমগ্র সৃষ্টিকে আবরণহীন অবস্থায় দেখছেন এবং যার দৃষ্টি থেকে পৃথিবী ও আকাশের কোন একটি বস্তুও গোপন নেই এটি তার সাক্ষ্য।
আর তার চেয়ে নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য আর কে দিতে পারে? কারণ পৃথিবীতে ইলাহের স্বত্ব দাবী করার অধিকার ও যোগ্যতা কারও নেই। তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ব্যতীত আর কোন হক্ক ইলাহ নেই। তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করা জুলুম ও অন্যায়।
আল্লাহ তায়ালার এ সাক্ষ্যের সাথে তিনি আল্লাহ তার ফেরেশতাদেরকেও শরীক করেছেন। তারাও এ মহৎ সাক্ষ্য দিয়ে থাকে। তারপর আল্লাহ তায়ালা আলেম তথা দ্বীনের জ্ঞানে জ্ঞানীদেরকেও এ সাক্ষ্য প্রদানের জন্য গ্রহণ করে সম্মানিত করেছেন।
এর মাধ্যমে তিনি মূলত আলেম তথা দ্বীনের জ্ঞানে জ্ঞানীদের সম্মান বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছেন।