40749

08/17/2025 ইরানকে সমর্থন, নিজ দেশে সমালোচনার মুখে দ. আফ্রিকার সেনাপ্রধান!

ইরানকে সমর্থন, নিজ দেশে সমালোচনার মুখে দ. আফ্রিকার সেনাপ্রধান!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৬ আগস্ট ২০২৫ ২১:৫৬

ইরানে সরকারি সফরে গিয়ে মন্তব্যের জেরে নিজের দেশে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সেনাপ্রধান জেনারেল রুদজানি মাফওয়ান্যা।

শনিবার (১৬ আগস্ট) কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মঙ্গলবার তেহরানে ইরানি প্রতিপক্ষ মেজর-জেনারেল সাইয়্যেদ আবদুর রহিম মুসাভির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রামের প্রতি ইরানের ঐতিহাসিক সমর্থনের কথা স্মরণ করে রুজদানি বলেছেন, ‘দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এই সম্পর্ক দুটি জাতির মধ্যে একটি স্থায়ী বন্ধন তৈরি করেছে।’

ইরানি সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমস অনুসারে, তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র এবং ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের লক্ষ্য একই। আমরা সর্বদা বিশ্বের নিপীড়িত ও অরক্ষিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।’

রুজদানি ইসরায়েলের খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমাবর্ষণ এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে চলমান আগ্রাসনের নিন্দা করেছেন বলে জানায় সংবাদমাধ্যমটি।

এদিকে গত সপ্তাহে, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যের উপর ৩০ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা দেশটির ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করার পরেও এই শুল্ক ঘোষণা করা হয়। সেনাপ্রধানের এই ধরনের মন্তব্য দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইতিমধ্যেই অস্থিতিশীল সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলেই জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, যখন প্রিটোরিয়া বাণিজ্য স্থিতিশীল করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করছে, তখনই ওই মন্তব্যগুলো এসেছে। মন্তব্যে বলা হয়েছে, ইরান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অভিন্ন সামরিক লক্ষ্য রয়েছে।

বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার কার্যালয় জানিয়েছে, জেনারেল রুজদানির ইরান সফর সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট অবগত ছিলেন না, যদিও এই ধরনের সফর সাধারণত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত হবে, রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে নয়।

রামাফোসা ২০২১ সালে রুজদানিকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। বর্ণবাদ-যুগের দক্ষিণ আফ্রিকায় জেনারেল রুজদানি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) এর সেনা শাখায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যা একটি মুক্তি আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়েছিল এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল।

প্রেসিডেন্সির মুখপাত্র ভিনসেন্ট ম্যাগওয়েনিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জেনারেলের ইরান সফরের সিদ্ধান্তটি খুব খারাপ সময়ে করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সংঘাতের এই তীব্র সময়ে, কেউ বলতেই পারে যে এই সফরটি অযৌক্তিক ছিল এবং জেনারেলের তার মন্তব্যের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।’

ভিনসেন্ট আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সূক্ষ্ম প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বাণিজ্য সম্পর্ককে এমনভাবে ভারসাম্যপূর্ণ করা যাতে বাণিজ্য সম্পর্ক পারস্পরিকভাবে লাভজনক হয়।’

একইভাবে, দেশটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেনাপ্রধানের কথিত মন্তব্যের সঙ্গে সরকারের কোনো সর্ম্পক নেই বলে দাবি করেছে।

বুধবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে রাজনৈতিক ও নীতিগত বিবৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে... প্রতিরক্ষা ও সামরিক মন্ত্রী ম্যাটসি অ্যাঞ্জেলিনা মোতশেকগা সেনা প্রধানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন।’

এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার জোট সরকার গঠনকারী চারটি দলের মধ্যে একটি ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (ডিএ) দল ‘গুরুতর অসদাচরণ এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘনের অভিযোগে সেনাপ্রধানের সামরিক আদালতে বিচারের দাবি জানিয়েছে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]