গোপালগঞ্জে পরীক্ষামূলকভাবে মুক্তা চাষে সাফল্য এসেছে। ডিজাইন ও মানভেদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সহযোগিতা পেলে এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করা সম্ভব। জেলার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে মুক্তা চাষ সমৃদ্ধির হাতছানি দিচ্ছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান সিরাজ জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোটালীপাড়া উপজেলার ৬টি পুকুরে পরীক্ষামূলকভাবে ৭,৮০০ ঝিনুকে ইমেজ প্রতিস্থাপন করে মুক্তা চাষ করা হয়। এ মাসের শুরুতে ঝিনুক থেকে প্রায় ১৭,৪০০ ইমেজ মুক্তা আহরণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, পুকুরে মাছের সঙ্গে ঝিনুকে মুক্তা চাষ করা যায়। ঝিনুককে বাড়তি খাবার দিতে হয় না। ফাইটো প্লান্টন প্রাকৃতিকভাবে পুকুরে জন্মে। যেসব পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইটো প্লান্টন আছে, সেসব পুকুরে মুক্তা চাষ করা যায়। ফাইটো প্লান্টন ঝিনুকের খাবার।
এক একর আয়তনের পুকুরে প্রায় ২০ হাজার ঝিনুক চাষ করা যায়। প্রতিটি ঝিনুকে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা মূল্যের মুক্তা উৎপাদিত হয়। তাই লাভজনক মুক্তা চাষে উদ্যোক্তারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
এই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা জেলার ৫ উপজেলা থেকে ৫ জন করে নিয়ে মোট ২৫ জন উদ্যোক্তা গ্রুপ তৈরি করেছি। এদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে এরা ইমেজ মুক্তা দিয়ে গহনা তৈরি করবে।”
দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. খালিদুজ্জামান বলেন, “৩ বিভাগের ১০ জেলার ৫২টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় মাছের সঙ্গে ঝিনুকে মুক্তা চাষ করা হচ্ছে। তবে বাজারে প্রচলিত গোলাকৃতির মুক্তার সঙ্গে ইমেজ মুক্তার পার্থক্য রয়েছে। গোল আকৃতির মুক্তা আহরণে ৩ বছর সময় লাগে। পক্ষান্তরে ইমেজ মুক্তা মাছের সঙ্গেই ঝিনুকে বেড়ে ওঠে। একইসঙ্গে চাষী মাছ ও মুক্তা আহরণ করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “মুক্তা চাষে বল, নেট, ঝিনুকে মুক্তার ইমেজ স্থাপনে ঝিনুক প্রতি ২০ টাকা খরচ হয়। ঝিনুককে কোনো খাবার দিতে হয় না। ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে মুক্তা সংগ্রহ করা যায়। এ কারণে এ প্রকল্পে ঝিনুকে ইমেজ মুক্তা চাষ অন্তভূক্ত করা হয়। মাছের সঙ্গে মুক্তা চাষ করে চাষী বাড়তি আয় করতে পারেন। ইমেজ মুক্তা বিভিন্ন ডিজাইনের হয়ে থাকে। একটি ঝিনুক থেকে ২টি মুক্তা সংগ্রহ করা যায়। ঝিনুক থেকে সংগ্রহ করা মুক্তা চাষী ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারেন। প্রসেস করার পর এ মুক্তা ৬০০ থেকে ১,০০০টাকা দরে বিক্রি হয়।”
তিনি জানান, গোপালগঞ্জ, শরীয়াতপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলার স্বাদু পানির পুকুরে মুক্তা চাষ করা যেতে পারে । এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইমেজ মুক্তার তৈরি গহনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এ মুক্তার গহনা বিদেশে রফতানী করে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
প্রকল্পের মাঠ সহায়ক কর্মী ঝুনু হালদার ও শ্যামল বাড়ৈ বলেন, “মৎস্যচাষীরা পাইলট প্রকল্প থেকে কোটালীপাড়া উপজেলার ৬টি পুকুরে বাস্তবায়িত ঝিনুকে মুক্তা চাষ দেখেছেন। মাছ চাষের সঙ্গে ঝিনুকে মুক্তা চাষ করে বাড়তি আয় করা সম্ভব বলে আমরা তাদের দেখাতে সক্ষম হয়েছি। এখন তারা ঝিনুকে মুক্তা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।”
কোটালীপাড়া উপজেলার টুপুরিয়া গ্রামের তাজিম শেখ (২৬) ও কুশলা গ্রামের হামিম হওলাদার বলেন (২৫) বলেন, “আমরা মুক্তা চাষ দেখেছি। এটি লাভজনক। এ মৌসুমে আমরা পুকুরে মাছের সাথে মুক্তা চাষ করব। এছাড়া উপজেলা মৎস্য অফিস আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তা থেকে গহনা তৈরির কুটির শিল্প স্থাপন করব। আমরাই আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব।”
শিক্ষার্থী মুন্নি কাজী (২৪) বলেন, “পড়াশোনা শেষ করেছি। এখন উদ্যোক্তা হব। মুক্তা থেকে গহনা তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজে সাবলম্বী হয়ে অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব।”
গোপালগঞ্জে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, “ঝিনুকে মুক্তা চাষ লাভজনক উদ্যোগ। এতে চাষী ও যুব সমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে দেশ । এ ক্ষেত্রে আমরা মুক্তা চাষী ও মুক্তা থেকে গহনা প্রস্তুকারীদের সবধরণের সহযোগিতা করব।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজন নন্দী জানান, জেলার ৫ উপজেলায় ১৯,৪৮২ পুকুর রয়েছে। এসব পুকুরে লাভজনক মুক্তা চাষে মৎস্য বিভাগ চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে ।
এসএন /সীমা