সোমবার, ২৫শে আগস্ট ২০২৫, ১০ই ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


সংকটের আট বছর: রোহিঙ্গারা ফিরবেন কবে?


প্রকাশিত:
২৫ আগস্ট ২০২৫ ১০:১৭

আপডেট:
২৫ আগস্ট ২০২৫ ১১:৪৬

ছবি ‍সংগৃহিত

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতন থেকে বাঁচতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সেই গণপালনের আট বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু এতদিন পরেও এই সংকটের কোনো টেকসই সমাধান হয়নি। কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, কবে নাগাদ তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবেন। আর রোহিঙ্গারা নিজের দেশে ফিরতে চাইলেও চায় নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার এবং সম্মানের নিশ্চয়তা।

আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বয়ে বেড়াচ্ছেন নির্যাতনের ভয়াবহ স্মৃতি। রাখাইনে সেনাবাহিনী, মগ গোষ্ঠী ও বিদ্রোহীদের হাতে ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ—সবই সইতে হয়েছে তাদের। এখনও তারা ভুক্তভোগী, এখনও ন্যায়বিচার পায়নি কেউ। পরিস্থিতি এতটাই অনিশ্চিত, নতুন করে আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। আবার যারা আগে এসেছে, তারা জানেই না—কবে ফিরতে পারবেন, আদৌ পারবেন কি না।

রাখাইনে সেনা নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর জাহান বলেন, সেনাবাহিনী তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে, আর তাকেও ধর্ষণ করে। এরপর অনাহারে-অর্ধাহারে কাটিয়ে যমজ সন্তান জন্ম দেন, যার একটি মারা যায়। বর্তমানে কক্সবাজারের শিবিরে থাকলেও অতীতের স্মৃতি ভুলতে পারেননি তিনি। বললেন, আট বছর কেটে গেলেও বুকের কষ্ট কমেনি। ফেরার কথা বললেই ভয় লাগে। ওখানে এখনো নির্যাতন থামেনি।

অন্যদিকে ক্যাম্প-২ এর ফাতেমা বেগম জানান, তাকেও আট বছর আগে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় উগ্র মগ যুবকরা ধর্ষণ করেছিল। স্বজনদের চোখের সামনে হত্যা করা হয়েছিল। এখনো সেই দৃশ্য ভুলতে পারেননি তিনি। বললেন, ও দেশে আর যেতে চাই না। নাগরিকত্ব দিলে ভাববো। এর আগে নয়।

এই আট বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বহু আলোচনা, বহু পরিকল্পনা হয়েছে। ২০১৮ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছিল। বলা হয়েছিল, দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। পরে চীনের মধ্যস্থতায় ২০২৩ সালে ১ হাজার ১০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেই উদ্দেশ্যে ট্রানজিট ক্যাম্পও তৈরি হয়, কিন্তু সেটিও বাস্তবায়িত হয়নি।

বর্তমানে কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে ১৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর নতুন করে আশ্রয় নেয় প্রায় ৮ লাখ। শুধু ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত নতুন করে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এত দীর্ঘ সময় ধরে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় সরকারও উদ্বিগ্ন। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে স্বদেশে প্রত্যাবাসন। আর এই বিষয়ে নতুন করে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের ইনানীতে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনও শুরু হয়েছে। সেখানে ৪০টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।

এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি, কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরাও। রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতির কথা।

রোহিঙ্গারা বলছেন, তাদের মাটিতে ফিরে যেতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেটি হতে হবে নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তার ভিত্তিতে। তারা যেন আর কোনোদিন সেই ভয়াবহতার মধ্যে ফিরে না যায়, সেটিই তাদের দাবি। তবে বর্তমানে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর লড়াই চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

এসএন/রুপা


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top