সোমবার, ৪ঠা আগস্ট ২০২৫, ২০শে শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


হাসিনা-কামালের একই আইনজীবী নিয়ে বার্গম্যানের প্রশ্ন


প্রকাশিত:
৪ আগস্ট ২০২৫ ১৬:০৫

আপডেট:
৪ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৫২

ছবি সংগৃহীত

জুলাই-আগস্টে সারাদেশে হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ বিচার প্রক্রিয়ার সূচনা হয়।

এ বিচার প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিষয়ে দীর্ঘদিন লিখে আসা ডেভিড বার্গম্যান একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের এই দুই অপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তিনটি মূল বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

ডেভিড বার্গম্যান লিখেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশে রোববার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তার বিচার শুরু হয়েছে। সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমার কিছু উদ্বেগ রয়েছে—

১. আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত এক আইনজীবী, দুই মক্কেল

ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার পক্ষে যে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন, তিনি কেবল সাবেক প্রধানমন্ত্রীরই নন, তার সঙ্গে অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানেরও আইনজীবী। আসাদুজ্জামান খানও পলাতক। এটি বড় ধরনের সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাতের সমস্যা তৈরি করে, যা তাদের প্রত্যেকের যথাযথ আইনি সুরক্ষাপ্রাপ্তিতে বাধা। কারণ, বিচারে এই দুই অভিযুক্ত ব্যক্তির স্পষ্টতই একেবারে ভিন্ন স্বার্থ থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ওপর দায় চাপাতে পারেন অথবা এর উল্টোটাও হতে পারে।

প্রত্যেক পলাতক আসামির পক্ষে অবশ্যই আলাদা একজন আইনজীবী থাকা উচিত। সিদ্ধান্তটি ট্রাইব্যুনালকেই নিতে হবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান

২. আত্মপক্ষ সমর্থনে প্রস্তুতির সময়

দুই অভিযুক্ত ব্যক্তির রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ২৫ জুন অর্থাৎ বিচার শুরুর পাঁচ সপ্তাহ আগে প্রসিকিউশনের সরবরাহ করা সব সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়েছেন। আমি মনে করি, (এই সময়ের মধ্যে) কোনো আইনজীবীর পক্ষে উভয় মক্কেলের জন্য যথাযথ আত্মপক্ষ সমর্থনের কৌশল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা ও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা অসম্ভব। বিশেষ করে যখন আইনজীবী তার মক্কেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, শেখ হাসিনা ও (আসাদুজ্জামান) খানের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তার আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রস্তুতির জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আরও সময় চেয়ে আবেদনও করেননি। যখন আমি আইনজীবীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেন তিনি আজ শুনানি মুলতবির আবেদন করেননি? তখন তিনি বলেন, ‘যখন প্রয়োজন হবে, তখনই তিনি মুলতবির আবেদন করবেন এবং তিনি আজ প্রথম সাক্ষীকে জেরা করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।’

আমি মনে করি, আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, হাসিনার যদি নিজস্ব আইনজীবী উপস্থিত থাকতেন, তাহলে তারা অবশ্যই শুনানি মুলতবির আবেদন করতেন। আর বাস্তবতা হলো, বর্তমান রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এই আবেদন করেননি, যা বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো।

৩. সাক্ষ্যের ‘বৈপরীত্য’ নিয়ে জেরা বন্ধ করলেন প্রসিকিউশন/ট্রাইব্যুনাল

(জামায়াত নেতা) কাদের মোল্লার যুদ্ধাপরাধ মামলায় (যেখানে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় হয়েছিল এবং যেটি শেখ হাসিনার সরকারের আমলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল) ২০১৩ সালের আপিল বিভাগের একটি রায় ব্যবহার করে প্রসিকিউটররা আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীকে প্রথম সাক্ষীকে জেরা করা থেকে বিরত রাখেন। এই জেরা ছিল পূর্বে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে যা বলেছিলেন এবং আজ আদালতে যা বলেছেন, দুই বক্তব্যের মধ্যে বৈপরীত্য নিয়ে। এ ধরনের জেরা বাংলাদেশের সাধারণ ফৌজদারি আদালতগুলোয় একটি প্রচলিত প্রথা।

যে পরিহাসের ঘটনা, এমনকি এর চেয়েও শক্তিশালী কোনো শব্দ দিয়ে বর্ণনা করা যেতে পারে! প্রসিকিউশন আইনজীবীরা যা করেছেন, সেটি খুবই চোখে পড়ার মতো। এক দশক আগে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ নিয়ে অনুষ্ঠিত আগের বিচারগুলোতে, যেখানে মূলত জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচার হয়েছিল, তৎকালীন প্রসিকিউটররাও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দুটি সাক্ষ্যের মধ্যে থাকা বৈপরীত্য তুলে ধরা থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিলেন।

ওই সময় জামায়াতের আইনজীবীরা, যাদের মধ্যে তাজুল ইসলাম ও অন্য যারা বর্তমানে প্রসিকিউটর দলের অংশ, তারা তখন প্রসিকিউশনের বিরুদ্ধে জোরালো যুক্তি দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, এটি খুবই অন্যায়, কারণ, এটি তাদের সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে। যখন কাদের মোল্লার মামলায় বিষয়টি আপিল বিভাগে আসে, তখন প্রধান বিচারপতি সিনহা (এস কে সিনহা) তার রায়ে প্রসিকিউশনের পক্ষ নিয়ে বলেছিলেন, আইসিটি আইন ও বিধিতে এ সুযোগ নেই।

সুতরাং, এখন আমরা এমন একটি পরিস্থিতি দেখছি, যেখানে বর্তমানে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সেই একই আপিল বিভাগের রায় ব্যবহার করছেন, যে রায়ের ফলে তিনি একসময় যেসব ব্যক্তির পক্ষে আইনি লড়াই করেছিলেন তাদের একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল। সেই একই নিয়ম তিনি প্রয়োগ করার চেষ্টা করছেন, যা তিনি অতীতে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জন্য অত্যন্ত অন্যায্য বলে মনে করেছিলেন আর ট্রাইব্যুনাল বিচারকেরা তা মেনে নিয়েছেন।

আমি যখন তাজুল ইসলামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি বললেন, ‘আইন পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এটি আপিল বিভাগের নির্দেশনা।’

জেরার শেষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীকে ‘একটি ভালো জেরা’ করার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বরং অদ্ভুত মন্তব্য করেছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীর জেরা করার ক্ষমতা যখন উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে, তখন তিনি কীভাবে এমন মন্তব্য করতে পারেন, তা পরিষ্কার নয়।

যদি ট্রাইব্যুনাল আপিল বিভাগের সেসব রায় অনুসরণ করতে থাকেন, যা এখন সাধারণত অত্যন্ত বিতর্কিত ও অন্যায্য বলে বিবেচিত, তাহলে সরকারের উচিত আইন পরিবর্তন করা, যাতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সাক্ষীরা যা বলেছিলেন ও আদালতে তারা যা বলেছেন, দুটোর মধ্যে বৈপরীত্যের ভিত্তিতে তাদের জেরা করার সুযোগ পান।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top