শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫, ৩রা শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


‘পানি লাগবে, পানি...’ বিতরণ করতে গিয়ে এই দিন গুলিবিদ্ধ হন মুগ্ধ


প্রকাশিত:
১৮ জুলাই ২০২৫ ১৩:০৮

আপডেট:
১৮ জুলাই ২০২৫ ১৬:২৪

ছবি সংগৃহীত

সেদিন ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক উত্তাল দিন, যখন ঢাকার রাজপথ কাঁপছিল ন্যায় আর মুক্তির দাবিতে। সেই তপ্ত দুপুরে, যখন হাজারো কণ্ঠ স্লোগানে মুখর, ঠিক তখনই এক তরুণ প্রাণ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, হাতে পানি আর বিস্কুট নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন আন্দোলনকারীদের তৃষ্ণা মেটাতে। কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস!

মানুষের সেবায় নিবেদিত সেই হাতগুলোই হয়ে উঠলো সহিংসতার শিকার। গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ার পর তার গলায় ঝোলানো রক্তমাখা আইডি কার্ডটি যেন চিৎকার করে বলছিল এক অকথিত আত্মত্যাগের গল্প, যা আজও সেই গণঅভ্যুত্থানের প্রতিটি রক্তবিন্দুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

গত বছরের (২০২৪ সাল) এই দিনে (১৮ জুলাই) আন্দোলনের সময় খাবার পানি এবং বিস্কুট বিতরণ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মুগ্ধ। মুগ্ধর মৃত্যু জুলাই আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।

যদিও সেই দিনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের গুলিতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ছেন তিনি। এই সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কাউকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

কী ঘটেছিল সেদিন

ঘটনার দিন, যখন আন্দোলন এক চরম পর্যায়ে পৌঁছায় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়, ঠিক তখনই গুলিবিদ্ধ হন মুগ্ধ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনি তখনো হাতে পানির বোতল নিয়ে আন্দোলনকারীদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। গুলি লাগার পর তিনি লুটিয়ে পড়েন রাজপথে। তার গলায় ঝোলানো আইডি কার্ডটি রক্তে ভিজে একাকার হয়ে যায়, যা তার পরিচয় বহন করার পাশাপাশি সেদিনের বর্বরতার সাক্ষী হয়ে থাকে।

মুগ্ধের এই আত্মত্যাগ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। তার রক্তমাখা আইডি কার্ডটি শুধু একটি পরিচয়পত্র ছিল না, বরং তা ছিল সেদিনের আন্দোলনের এক নীরব দলিল, যা স্মরণ করিয়ে দেয় কত শত তরুণ তাদের জীবন বাজি রেখেছিলেন একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজের জন্য। তার মতো অসংখ্য তরুণ-তরুণীর আত্মত্যাগই এই গণঅভ্যুত্থানকে সফলতার দিকে নিয়ে গিয়েছিল।

প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিবারে শোকের ছায়া

গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তরুণ স্বেচ্ছাসেবক মুগ্ধর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার (১৮ জুলাই)। এই দিনে তার পরিবারে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। মুগ্ধর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতি নিয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেন।

স্নিগ্ধ বলেন, এক বছর হয়ে গেল, আমরা নিজেরাই ফুটেজ সংগ্রহ করে দিলাম, কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারল না। এটা মেনে নেওয়া যায় না।

শহিদ মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শেষবার যখন দেখা হয়, ওর সাথে কথা বলতে চেয়েও পারিনি। সেই আফসোস আজও আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। বিচারের এই ধীরগতি আমাদের হতাশ করেছে। সরকারের এই ব্যর্থতা মেনে নেওয়ার মতো নয়।

মুগ্ধের মৃত্যু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম আলোচিত ও মর্মান্তিক ঘটনা ছিল। তার রক্তমাখা আইডি কার্ডসহ গুলিবিদ্ধ দেহের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মুগ্ধর পরিবার এবং সাধারণ মানুষ আশা করেছিল, এই ঘটনার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার প্রক্রিয়া থমকে থাকায় তাদের হতাশা আরও বাড়ছে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top