লিচু খাওয়ার ভুল অভ্যাসে ঘটছে দুর্ঘটনা
প্রকাশিত:
২ জুন ২০২৫ ১১:৪৬
আপডেট:
৪ জুন ২০২৫ ০৪:৩২

গ্রীষ্মকাল মানেই ফলের রাজত্ব, আর এই সময়ের অন্যতম প্রিয় ফল হচ্ছে লিচু। লালচে রঙের ছোট এই ফলটির মিষ্টি স্বাদ ও রসালো গঠন ছোট-বড় সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। কিন্তু সামান্য এক ভুল অভ্যাসের কারণে এই সুস্বাদু ফলটি কখনো কখনো প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। অনেকেই জানেন না লিচু খাওয়ার সঠিক নিয়ম। ফলে চিরচেনা এই ফলটি নিয়ে ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
ভুল অভ্যাসেই প্রাণহানি
আমাদের সমাজে এখনও অনেকেই লিচু খাওয়ার সময় একটি মারাত্মক ভুল করেন— লিচুর খোসা খুলে পুরোটা বিচিসহ মুখে ঢুকিয়ে চুষে খাওয়ার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে শিশুদেরকে এভাবেই লিচু খেতে শেখানো হয়। এতে করে খাওয়ার সময় অসাবধানতাবশত বিচি গলায় আটকে শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে। যার ফলশ্রুতিতে শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, ৩–৮ বছরের শিশুরা এ ধরণের দুর্ঘটনার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকে। কারণ তাদের গলার শ্বাসনালি অপেক্ষাকৃত সরু এবং সংকুচিত। আর শিশুদের মাঝে খেলার ছলে বা তাড়াহুড়া করে খাওয়ার প্রবণতা বেশি, যা বিপদের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
সঠিক নিয়ম কী হওয়া উচিত?
লিচু খাওয়ার সঠিক নিয়ম খুবই সহজ, কিন্তু সচেতনতার অভাবে অনেকেই তা মেনে চলেন না। নিচে ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলো:
১. প্রথমে লিচুর খোসা পুরোপুরি খুলে ফেলুন।
২. তারপর বিচিসহ সম্পূর্ণ লিচুটি মুখে না দিয়ে, হাতে ধরে কামড়ে কামড়ে খেয়ে মাংসল অংশটি খান।
৩. বিচি মুখে নেয়ার চেষ্টা করবেন না। বিচি আলাদা করে ফেলে দিন।
৪. শিশুদের কখনোই লিচুর বিচিসহ পুরো ফল মুখে দিতে দিবেন না। তারা যেন হাত দিয়ে কামড়ে খেতে শেখে, তা নিশ্চিত করুন।
অভিভাবকদের করণীয়
শিশুদের কখনোই একা লিচু খেতে দেওয়া উচিত নয়।
শিশুদের সামনে সঠিকভাবে ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
লিচু খাওয়ার সময় পাশে থেকে খেয়াল রাখুন।
যদি কোনও শিশু খাওয়ার সময় হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে যায় বা কথা বলতে না পারে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা সহায়তা নিতে হবে।
চিকিৎসকদের বার্তা
শিশুদের গলায় বিচি বা ছোট বস্তু আটকে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্স না পেলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। তাই সচেতনতাই একমাত্র পথ।
একটি ছোট ফল, একটি ছোট ভুল, আর একটি জীবনের চিরতরে প্রস্থান—এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা কেউই চাই না। তাই আসুন, লিচু খাওয়ার সঠিক নিয়মটি জানি, শিখি ও অন্যদেরও সচেতন করি। ফল খাওয়ার আনন্দ যেন দুর্ঘটনায় পরিণত না হয়, সেটাই আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: