বিপর্যস্ত নেপালের পর্যটন খাত, ২ দিনে ক্ষতি ২৫০০ কোটি রুপি
প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:০২
আপডেট:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১৫

জেন জি'র দুই দিনের বিক্ষোভে নেপালের পর্যটন খাত চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ৮ থেকে ৯ সেপ্টেম্বরের এই আন্দোলনে হোটেল ভাঙচুর, যাতায়াত ব্যাহত হওয়া এবং ব্যাপক বুকিং বাতিলের কারণে আনুমানিক ২৫ বিলিয়ন বা ২,৫০০ কোটি রুপির ক্ষতি হয়েছে।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) নেপালের ইংরেজি দৈনিক দ্য হিমালয়ান টাইমসের একটি প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। পর্যটনের শীর্ষ মৌসুম শুরুর ঠিক আগে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় উদ্যোক্তা ও নীতিনির্ধারকেরা শঙ্কিত হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী।
হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপালের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমপক্ষে দুই ডজনের বেশি হোটেল ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, রাজধানী কাঠমান্ডুর হিলটন হোটেল একাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতির পরিমাণ ৮ বিলিয়ন রুপিরও বেশি। শুধু কাঠমান্ডু নয়, পোখারা, ভৈরহাওয়া, বিরাটনগর এবং ধানগঢ়ীসহ অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই বড় ধরনের ধাক্কা সত্ত্বেও পর্যটন খাতের নীতিনির্ধারকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক রাজ জোশী বলেন, 'পর্যটন খাত অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে। অতীতে ২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প কিংবা কোভিড-১৯ মহামারীর পরও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এবারও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।'
তিনি জানান যে, ইতিমধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রস্তুত আছে। অর্থনীতিবিদ ড. সামির খাতিওয়াড়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, বিশ্ববাসীর কাছে নেপালের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে হবে। একইসঙ্গে দেশে আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং বর্তমানে নেপালে থাকা প্রায় ১৫ হাজার বিদেশি পর্যটকের নিরাপদ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপালের সভাপতি বিনায়ক শাহ মনে করেন যে, দেশের পর্যটন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে সব অংশীজনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, 'পর্যটন মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে। এখনই সময় বিশ্বের কাছে নেপালের ইতিবাচক বার্তা পাঠানোর।' ট্রেকিং এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব নেপাল এবং মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনসহ অন্যান্য পর্যটন সংগঠনও ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তাদের মতে, পর্যটকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা ছাড়া দ্রুত পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়।
পাহাড়-পর্বত, হিমালয় ট্রেকিং, বৌদ্ধ ও হিন্দু ঐতিহ্য—সব মিলিয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক নেপালে ভিড় করেন। এই খাত দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। শীর্ষ মৌসুম শুরুর ঠিক আগে এই বিপর্যয় দেশটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এখন সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ, উদ্যোক্তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিবাচক প্রচারণার ওপরই নেপালের পর্যটন খাতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: